গাইবান্ধায় হস্তশিল্প মেলার নামে চলছে জুয়া ও অশ্লীল নাচ!

৩ সপ্তাহ আগে
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় হস্ত ও কুটির শিল্প মেলার নামে লটারির আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া এবং অশ্লীল নাচের আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জেনেও নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

মাইকিং করে লটারির আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়ার আয়োজন চলছে বলে অভিযোগ উঠে মেলার আয়োজক ‘জে.বি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

 

১৭ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য অনুমতি পেলেও এলাকাবাসীর বাধায় মেলা বন্ধ হয়। পরে আবার ১ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিনের জন্য শুরু হয় মেলার নামে জুয়ার এই আয়োজন। এতে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অটোরিকশা ও সিএনজিতে মাইকিং করে ২০ টাকার লটারির কুপন বিক্রি করা হচ্ছে। পুরস্কারের তালিকায় রয়েছে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, বাইসাইকেল, গহনা প্রভৃতি। প্রতিদিন এসব টিকিট বিক্রি করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে র‌্যাফেল ড্র’র নামে জুয়া খেলা।

 

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় ব্যানারে নাম না থাকার জেরে ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা

 

হস্ত ও কুটির শিল্প মেলার নামে আয়োজিত এই মেলায় নেই কোনো স্থানীয় উদ্যোক্তার অংশগ্রহণ বা শিল্পপণ্যের স্টল।

 

শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, রেলস্টেশনের পতিত জায়গায় নির্মিত সুসজ্জিত তোরণের ভেতরে চলছে মেলা। এখানে রয়েছে কয়েকটি কাপড়, চটপটি ও কুকারিজের দোকান। একপাশে রয়েছে র‌্যাফেল ড্র’র জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ, যেখানে প্রতিদিন রাতে গান আর অশ্লীল নাচের পর র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।

 

একজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাফেল ড্র দেখতে গিয়েছিলাম। প্রথমে গান হলো, এরপর শুরু হয় অশ্লীল নাচ। লজ্জায় বেরিয়ে আসতে হয়েছে।’

 

গাইবান্ধায় হস্ত ও কুটির শিল্প মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীল নাচের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: সময় সংবাদ

 

সমাজকর্মী একরাম হোসেন বলেন, ‘র‌্যাফেল ড্র এক ধরনের জুয়া। এটি এলাকায় চুরি ও অন্যান্য অপরাধ বাড়িয়ে দিয়েছে। তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।’

 

এসএসসি পরীক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘পরীক্ষা সামনে। কিন্তু মেলার উচ্চ শব্দে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া যাচ্ছে না।’

 

এলাকাবাসীর দাবি, জেলা প্রশাসন ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯টি শর্তে মেলার অনুমতি দিয়েছিল, যার মধ্যে জুয়া ও অশ্লীল নাচ নিষিদ্ধ ছিল। ১৮-২৭ ফেব্রুয়ারি মেলার নির্ধারিত সময়সীমা শেষে রমজান উপলক্ষে একমাস মেলা বন্ধ থাকে। কিন্তু ঈদের দিন রাত থেকে পুনরায় মেলার নামে র‌্যাফেল ড্র চালু করা হয়।

 

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় বিএনপির অফিসে হামলার মামলায় গ্রেফতার ২

 

জুয়া খেলার অভিযোগ অস্বীকার করে ‘জে.বি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না, কুপন মেলা চত্বর থেকেই বিক্রি হচ্ছে।’ তবে অশ্লীল নাচ বা অনুমতি ছাড়া মেলা চালানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

 

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাল তমাল বলেন, ‘মেলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, ‘তাদের ১ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনের নতুন করে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ তবে লটারির আড়ালে জুয়া বা অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি মন্তব্য না করে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন