গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কম, ভোগান্তিই বেশি

২ সপ্তাহ আগে
অপারেশন বন্ধ, জেনারেটর বিকল, ওষুধের সংকট-এমন নানামুখী সমস্যায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা। চিকিৎসক ও জনবল সংকটেও ভুগছে হাসপাতালটি। অথচ স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব সমস্যা সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রায় ৮ লাখ মানুষের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু সংকট এতটাই প্রকট যে, রোগীরা সেবার বদলে ভোগান্তিই বেশি পাচ্ছেন। ২৬টি পদের বিপরীতে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে হাসপাতালটি। ফলে ধারণক্ষমতার তুলনায় দ্বিগুণ বা ততোধিক রোগী ভর্তি থাকায় কেউ কেউ ঠাঁই নিচ্ছেন মেঝে বা বারান্দায়। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের।

 

অপারেশন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ, বিকল জেনারেটরের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রোগীদের থাকতে হচ্ছে অন্ধকারেই। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহও। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবি উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।

 

আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ‘শূন্য প্রস্তুতি’ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে

 

বারান্দায় সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা শিরিনা খাতুন বলেন, ‘দুই দিন হলো মেয়েকে ভর্তি করেছি, এখনও কোনো সিট পাইনি। তাই বারান্দায় কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।’

 

আরেক রোগী গর্ভবতী শায়লা পারভীন বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে আরও বেশি অসুস্থ লাগছে। তীব্র গরমে মধ্যে করিডোরে ফ্যানও চলে না। আমাদের মতো অন্তত ২৫-৩০ জন গর্ভবতী নারী এই কষ্ট ভোগ করছেন।’

 

স্থানীয় শিক্ষক মারুফ হাসান বলেন, ‘হাসপাতালে সিট পাওয়া কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয়, জেনারেটরও নষ্ট। এ অবস্থায় রোগীদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে দ্রুত ১০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবি জানাই।’

 

প্রতিষ্ঠানে রোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা। স্বল্প বরাদ্দের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা সব সময় কয়েক গুণ থাকে বলে জানান তারা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত চাপ সামলাতে হিমশিম খাই। ২-৩ গুণ বেশি রোগী থাকায় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য সুবিধার অভাবে সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।’

 

শিশুবিষয়ক জুনিয়র কনসালটেন্ট হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী দেখতে হয়। অথচ একজন কনসালটেন্টের কাজ হলো, মেডিকেল অফিসারের রেফার করা রোগী দেখা। এখানে আমি নিজেই সিরিয়াল দিচ্ছি, রোগী দেখছি, সব কিছু করছি।’

 

আরও পড়ুন: করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বেশি, কী পরামর্শ চিকিৎসকদের

 

অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সমস্যাগুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। চাহিদাপত্রও পাঠানো হয়েছে।’

 

এদিকে, সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন। জেলা সিভিল সার্জন একেএম আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

 

উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৬ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। তবে দিন যতই গড়িয়েছে, বাড়েনি অবকাঠামো ও জনবল, বরং বেড়েছে রোগী ও দুর্ভোগ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন