খাল-জলমহাল ‘বদ্ধ’ দেখিয়ে ইজারা, কী বলছে প্রশাসন

৪ দিন আগে
খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় ‘বদ্ধ’ দেখিয়ে শত শত সরকারি খাল ও জলমহাল ইজারা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়দের মৎস্য ও কৃষিকাজ। শুধু এই একটি জলমহালই নয়, বিভিন্ন উপজেলায় এমন আরও ১৯৮টি জলমহাল সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের তথ্যে জানা গেছে।

জানা যায়, খালগুলোতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বসানো হচ্ছে নেট-পাটাতন ও বাঁধ, যা বাধা সৃষ্টি করছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে। এতে একদিকে যেমন মাছ ধরতে পারছেন না সাধারণ জেলেরা, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না জমিতে। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যজীবীরা।


সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনার পাইকগাছার লতা ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামের মানুষের জীবিকা এক সময় নির্ভর করত স্থানীয় একটি সরকারি খালের ওপর। খালটি গয়সা ও পোদা নদীর সঙ্গে যুক্ত।


স্থানীয়দের অভিযোগ, খালটিকে ‘বদ্ধ’ দেখিয়ে তা ইজারা দেয়া হয়। পরে খালের মুখসহ একাধিক স্থানে বসানো হয় পাটাতন ও জাল। বর্ষায় পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, আর শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি না থাকায় চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই জমি শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে পানির অভাবে।


আরও পড়ুন: রাজশাহীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার


স্থানীয় কৃষক নাজিম শেখ বলেন, ‘এই খাল থেকে আমরা জমিতে সেচ দিতাম, এখন এক ফোঁটা পানিও পাওয়া যায় না। ইজারা দিয়ে শুধু খাল নয়, আমাদের জীবিকা বন্ধ করে দিয়েছে।’


জেলে আবু তালেব গাজী বলেন, ‘আমার বাবা, দাদা-সবাই এই খাল থেকে মাছ ধরে খেত। এখন নামলেই ইজারাদারের লোকজন ধাওয়া দেয়। আইন আছে কিন্তু আমাদের কোনো অধিকার নেই!’


জেলেদের অভিযোগ, জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী এসব জলমহাল ইজারা দেয়ার হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে ইজারাদাররা নিয়ম না মেনে খালে বাধা সৃষ্টি করছেন। সরকারি তদারকি ও মনিটরিং কার্যক্রমেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। এ ছাড়াও আরও দুই শতাধিক খাল বা জলমহাল ইজারার বাইরে থেকেও প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


আরও পড়ুন: মামলা চলমান, বাদীকে উচ্ছেদে ‘ক্ষমতা দেখালেন’ বিবাদী ডিসি-এসিল্যান্ড!


ডুমুরিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা ও রূপসা উপজেলার একাধিক খালে অনুমতি থাকলেও স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। এসব খালেও প্রভাবশালীরা নেট-পাটাতন বসিয়ে দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছেন।


বটিয়াঘাটার এক নারী মৎস্যজীবী মমতাজ বেগম বলেন, ‘জাল ফেলে মাছ ধরেছিলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই লোক এসে বলল এই খাল তাদের। আমরা কোথায় যাবো?’


কৃষি বিভাগের হিসাব বলছে, খালপথে পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা ও সেচের অভাবে সময়মতো বীজ বোনা যাচ্ছে না, অনেক জমিতে একাধিক মৌসুমে ফসল তোলা সম্ভব হচ্ছে না।


এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জলমহাল উন্মুক্ত না করলে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদনে বড় ধরনের ধস নামবে। আমরা পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি। বিভিন্ন দফতর আমাদের আশ্বস্ত করেছে এ ব্যাপারে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’


আরও পড়ুন: মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৮ জলমহালে সাত কোটি টাকার মাছ লুট


তিনি আরও বলেন, ‘এই সংকট নিরসনে সরকার ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে খুলনার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৮টি খাল উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং জনগণের স্বার্থে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।


তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আরও খাল উন্মুক্ত করা হবে। পানি প্রবাহ রক্ষায় যেখানে বাধা আছে, সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলায় সরকারি নিবন্ধিত জলমহালের সংখ্যা ৬৪৩টি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন