শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ডব্লিউএফপির এক চিঠিতে এ সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এর আগে খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে ছয় ডলারে কমিয়ে আনার ঘোষণায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় আশ্রয়শিবিরে স্বস্তি ফিরেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘সম্প্রতি সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিল স্থগিত করলে ডব্লিউএফপির ‘তহবিল ঘাটতির’ কারণে রোহিঙ্গাদের একটি বার্তা দেয়া হয়েছিল। যা হলো এপ্রিল থেকে জনপ্রতি রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নেমে আসবে। কিন্তু ডব্লিউএফপি তহবিল পাওয়ার কারণে সেটা সাড়ে ১২ ডলার না হলেও ১২ ডলারে উন্নীত হবে। পহেলা এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে স্থানান্তর করা হয় ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে সাড়ে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে আরও ৬৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।
মার্চের শুরুতে হঠাৎ ‘তহবিল ঘাটতির’ কারণ জানিয়ে সহায়তার পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমানো সিদ্ধান্ত নেয় ডব্লিউএফপি। যা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয় এপ্রিল থেকে। কিন্তু রোহিঙ্গা মাসিক খাবারের বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ডব্লিউএফপি। এর আগে খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে ছয় ডলারে কমিয়ে আনার ঘোষণায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় স্বস্তি ফিরেছে আশ্রয়শিবিরে।

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘৫ মার্চ ডব্লিউএফপি তহবিল-সংকটের কথা উল্লেখ করে নতুন তহবিল না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মাসিক রেশন জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছিল। তখন রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছিল। কারণ, সাড়ে ১২ ডলারের ওই খাদ্যসহায়তায় একজন রোহিঙ্গার এক মাস দূরের কথা, ১৫ দিন চলত না। তখন রোহিঙ্গা তরুণ-যুবকেরা মাদক চোরাচালানসহ সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন আগে সিদ্ধান্ত বদল অপরিবর্তিত রাখায় রোহিঙ্গারা খুশি এবং অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত।’
এদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন বলছে, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত একই ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে দুশ্চিন্তামুক্ত হবার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিমান ধরে রাখতে অবদান রাখবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস দুজনই একই দিনে ক্যাম্পে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেছেন। এসময় দুজনই রোহিঙ্গাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের তহবিলের জন্য কাজ করবেন। জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকারের কারণে ডব্লিউএফপি তহবিল পেয়েছে। আপাতত অক্টোবর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের তহবিল নিশ্চিত হয়েছে। জনপ্রতি মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার দিতে না পারলেও কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গাদের জন্য ১২ ডলার এবং ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য ১৫ ডলার থেকে কমিয়ে ১৩ ডলার দেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে এশীয় নেতাদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
অতিরিক্ত কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মাসিক খাবারের বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আশাটা এটা বড় একটি স্বস্তির খবর। রোহিঙ্গাদের জন্য এ খবর স্বস্তি নিয়ে এসেছে। ডব্লিউএফপির এই তহবিলটা সকল কিছুর সঙ্গে জড়িত। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা এবং কি তাদের যে স্বাস্থ্যগত বিষয় রয়েছে, সব কিছু সঙ্গে রেশনের বিষয়টা জড়িত। এটার জন্য প্রধান উপদেষ্টা, জাতিসংঘের মহাসচিব ও মানবিক সহায়তাকারি সংস্থা এবং সর্বোপরি ডব্লিউএফপিকে ধন্যবাদ জানাই, তারা এই তহবিল সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। প্রত্যাশা রাখব, রোহিঙ্গাদের এই খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে যতক্ষণ পর্যন্ত না রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা না যায়।’
এর আগে ২০২৩ সালে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ১২ থেকে ১০ ডলার এবং তার দুই মাস পর সেখান থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের জুনে সেখান থেকে বেড়ে সাড়ে ১২ ডলার করা হয়।