ক্ষুদ্র একটি কোরআন, যার ইতিহাস অনেক বড়

৩ সপ্তাহ আগে
আয়তনে মাত্র ২ সেন্টিমিটার। লেখাগুলোও খুবই ছোট। এত ছোট যে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে পড়তে হয়। ক্ষুদ্র এই কোরআনটি কয়েক প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ করছে ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার একটি পরিবার।

মুসলিমদের মধ্যে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের একটি রীতি রয়েছে। আর তা হলো আগে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে অর্থাৎ ওজু করে তারপরই পড়তে হয় মহান আল্লাহর এই বাণী। আলবেনিয়ায় ক্ষুদ্র কোরআনটি পড়তেও সেই একই রীতি পালন করা হয়।

 

বহু বছর ধরে মারিও প্রুসি নামের এক ব্যক্তি সেই রীতি পালন করে চলেছেন। প্রথমে ‍ওজু করেন, এরপর ক্ষুদ্র কোরআনটি ধরে চুমু খান আর গভীর মমতায় একবার কপালে ছোঁয়ান। তারপর শুরু করেন তিলাওয়াত। 

 

আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানা শহরে বাস করেন ৪৫ বছল বয়সী মারিও প্রুসি। সম্প্রতি সেখানেই বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে ক্ষুদ্র এই কোরআনটি নিয়ে কথা বলেন তিনি। নিজের হাতে কোরআনটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এটি সংরক্ষণ করেছি।’

 

আরও পড়ুন: কাজের সময় রেকর্ড করা কোরআন তেলাওয়াত শোনা কি গুনাহ?

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোরআনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। রুপার একটি বাক্সের মধ্যে এটা রাখা হয়। সেই বাক্সটির রঙও কালো হয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণের অনুপস্থিতিতে কোরআনটি ঠিক কতটা পুরোনো সেটা নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তবে এল্টন কারাজ নামের তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কোরআন বিশেষজ্ঞের মতে, ৯০০ পৃষ্ঠার ক্ষুদ্র গ্রন্থটি ১৯ শতকের।

 

এল্টন কারাজ বলেন, ‘কোরআনটি খুবই ছোট ফরম্যাটে ছাপা। বিশ্বের অন্যতম ছোট। দেখে প্রতীয়মান হয় যে, এটা প্রকাশের সময় ১৯ শতকের শেষ দিকে। এটা একটা অসাধারণ কাজ, খুবই মূল্যবান। ভালো বিষয় হলো এটি আলবেনিয়ায় রয়েছে।’

 

তবে শুধুমাত্র আকৃতিই কোরআনটির একমাত্র উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বিষ্ময়কর ইতিহাস। যে ইতিহাস মারিও প্রুসির মুখে উঠে এসেছে। প্রুসি বলেন, তাদের পরিবার ছিল ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।

 

আরও পড়ুন: কোরআন তিলাওয়াতের আদব

 

তার কথায়, ‘কসোভোর জোকোভিকা অঞ্চলে মাটি খুঁড়ার সময় তার প্রো-পিতামহ অক্ষত অবস্থায় একটি মরদেহ খুঁজে পান। সেই মরদেহের ওপর ছিল কোরআনটি।’ এটি পাওয়ার পর তার প্রো-পিতামহ ক্যাথলিক থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।

 

মারিও প্রুসির দাদা ১৯৩০ সালের দিকে আলবেনিয়ার রাজা কিং জগের সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। সেই সুবাদে তিনি আরবি পড়তে পারতেন। তিনি প্রতি রাতে বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে কোরআনটি থেকে বিভিন্ন আয়াত পড়ে শোনাতেন।

 

কয়েক বছর পর আলবেনিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন শুরু হয়। কমিউনিস্ট নেতা এনভার হোক্সা দেশে ধর্ম চর্চা নিষিদ্ধ করেন। সকল ধর্ম পালনকারীদের জেলে ভরেন। তবে কোরআনটি রক্ষা করা গিয়েছিল। কারণ এর আকার ছিল অনেক ছোট।

 

ওই ঘটনার পর প্রুসির বাবা স্কেনদার কোরআনটিকে অক্ষত রাখতে গোপনে পার্শ্ববর্তী কসোভোতে নিজের বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দেন। ১৯৯৯ সালে কসোভোয় যুদ্ধ শুরু হলে কোরআনটি মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। যুদ্ধের পর এটা আবারও ফিরে পান স্কেনদার। ২০১২ সালে বাবার মৃত্যুর পর পবিত্র গ্রন্থটি সংরক্ষণের দায়িত্ব পান প্রুসি।

 

আরও পড়ুন: অর্থ না বুঝে কোরআন পাঠ করলেও সওয়াব হবে?

 

আকারে ক্ষুদ্র ও পুরনো হওয়ায় অনেকে এটা কেনার জন্য মারিওকে প্রস্তাব দিয়েছেন। এমনকি জাদুঘরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু এটা কখনও হাতছাড়া করবেন না বলে জানিয়ে দেন। প্রুসি বলেন, আমি কখনই এটি বিক্রির চিন্তা করিনি। এই কোরআন আমার পরিবারের সম্পদ। এটা আমাদের কাছেই থাকবে।’ 
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন