কোরবানির শিক্ষা ও তাৎপর্য

১ সপ্তাহে আগে
কোরবানি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। অথচ এতে এতো পরিমাণে ভেজাল প্রবেশ করেছে যে, খাঁটি জিনিসটা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। একহাজার লোকের মধ্যে দুই-চার জনের কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় কিনা? এটা একমাত্র মহান আল্লাহই ভালো জানেন।

এর কারণ হলো, যে ইবাদতগুলো আর্থিক, যে ইবাদাতগুলোতে শুধুমাত্র অর্থ ব্যয় করতে হয়, প্রথমত সেগুলো আদায়ে আমাদের নিয়তে ভেজাল থাকে। মহান আল্লাহর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো তিনি নিজে খাঁটি, খাঁটি ছাড়া তিনি কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। 

 

কোরআনের বহু জায়গায় তিনি বলেছেন, فَٱعْبُدِ ٱللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ ٱلدِّينَ আল্লাহর জন্য ইবাদাত করো। তোমার ঈমানকে, তোমার ইখলাসকে, তোমার নিয়্যতকে খাঁটি করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য ইবাদতে যদি কোনোভাবে ঢুকে পরে সেটা আল্লাহ গ্রহণ করেন না, বরং বাদ দিয়ে দেন। 

 

এজন্য আর্থিক ইবাদাতগুলোতে সাধারণত ভেজাল বেশি হয়। নামাজ মানুষ আল্লাহর জন্য আদায় করে, এখানে হয়ত খুব অল্পসংখ্যক মানুষ আছে যারা মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে। ম্যাক্সিমাম মানুষই নামাজ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এটা আলহামদুলিল্লাহ নির্ভেজাল একটা ইবাদাত। রোজাটাও অনেকটা সেরকম। ভেজাল হয় সেখানে যেখানে অর্থের ব্যাপার থাকে।

 

কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হচ্ছে কিনা এটি নিশ্চিত করা দুনিয়ার আর্থিক ইবাদতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন একটি কাজ। আপনার কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে নাকি লোক দেখানো মানসিকতার কারণে বরং উলটো গোনাহ লেখা হয়েছে এটি এখন হিসেব মিলানোর বিষয়। কোরবানিতে ভেজালটা খুব সহজে ঢুকে এই জন্য যে, এখানে টাকা খরচ করি আবার এর উপকার আমাদের কাছেই আসে। কোরবানির উপকার হিসেবে আমরা ফ্রেশ গোশত আহরণ করি।

 

এজন্য কোরবানিতে নিয়তের অসততাটা খুব বেশি হয়। কোরবানির মর্ম হচ্ছে, মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করা।

 

কোরবানির সূচনা হয়েছে ইবরাহিম (আ.) কে তার সন্তান কোরবানির আদেশ দেয়ার মধ্য দিয়ে। ছেলে কোরবানি করা তো অমানবিক ব্যাপার, অযৌক্তিক ব্যাপার, আল্লাহ তো অযৌক্তিক কোনো আদেশ করতে পারেন না। আল্লাহ ঐটা চানও নাই। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে এর মাধ্যমে পরীক্ষা করতে চেয়েছেন। তিনিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলেও রাজি, বাবাও রাজি, মাও রাজি। ছেলে কোরবানি হয় নাই কিন্তু আল্লাহর পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছেন, চূড়ান্ত সফলও হয়েছেন। এরপরে আল্লাহ তাআলা পশু হিসেবে সেখানে দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন, কোরবানি হয়ে গেল।

 

আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নিয়ে ইসলাম কী বলে


এখান থেকে আমাদের শিক্ষা হলো, কোরবানিটা আসলে আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের সকল সুখ, সব কিছুকে ত্যাগ করা। কোরবানি মানেই হলো ত্যাগ। এটিই হলো কোরবানির আসল শিক্ষা। কোরবানি শিক্ষা দেয় আল্লাহর আদেশ মানতে গিয়ে, আল্লাহর নিষেধ থেকে বাচঁতে গিয়ে সব কিছুর ত্যাগ।

 

আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিন্তু তার সাথে চলতে গিয়ে আমার আল্লাহর ইবাদাত ঠিকমতো হয়না এই বন্ধুকে আল্লাহর জন্য ত্যাগ করা এটা কোরবানির শিক্ষা। অনেক মানুষ আছেন এই ভয়ে কোরবানি করে যে, লোকে কী বলবে সারাজীবন করে আসছি এই বছর না করলে মানুষ কী বলবে? এর মানে হলো, কোরবানি নিজেদের এ সকল খাহেশ মিটাবার জন্য। আর কোনো ইবাদতের মাধ্যমে নিজেদের খাহেশ মিটানোর নাম ইবাদত নয়।

 

এ জন্য কবি নজরুল যে বলেছিলেন, যে বনের পশু কোরবানির আগে মনের পশুটাকে কোরবানি করো।বনের পশু কোরবানি করে মনের পশুকে তরতাজা করার কোনো অর্থ হয়না। কোরবানিতে ইখলাস আনার জন্য একটি পদ্ধতি আমরা অবলম্বন করতে পারি।

 

আপনি নিজেকে নিজে আত্মজিজ্ঞাসা করুন আমি কোরবানিটা কেন দিচ্ছি? গোশত আহরণ করা, কেনার পরে লাভ লসের হিসেব কষা এইগুলো প্রমাণ করে যে কোরবানির আসল উদ্দেশ্যটা আমাদের মাথায় নাই। লৌকিকতা, লোক দেখানো এটি এমন একটি রোগে পরিণত হয়েছে যে এটা থেকে বেঁচে থাকা বড় কঠিন। আত্মজিজ্ঞাসা করবার পর সন্তোষজনক জবাব নিজের মন থেকে না আসার আগ পর্যন্ত কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নিবেন না। এটাকে বলে আত্মসংগ্রাম, এটাকে বলে নিজেকে সংশোধন করা, এটাকে বলে জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের পথে আসার চেষ্টা করা, ইউটার্ন করার চেষ্টা করা।

 

আরও পড়ুন: সৌদি পৌঁছেছেন ৮৭ হাজার ১৫৭ হজযাত্রী


এক কথায় আপনি কোরবানি করার আগে এনশিওর হন আপনি এটা আল্লাহর জন্য করছেন কিনা? যদি আল্লাহর জন্য না হয় গোশতের জন্য হয় তাহলে আপনি এই কোরবানি করে টাকা নষ্ট করবেন না। আর যদি আল্লাহর জন্য করে থাকেন তাহলে তো এখানে লসের কোন কিছু নাই পুরোটাই আপনার সেভিংসে জমা হবে।

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোরবানি করার তাওফিক দান করুন এবং কোরবানির যে আসল উদ্দেশ্য ত্যাগ আল্লাহর হুকুম মানার জন্য যত রকমের ত্যাগ আছে সবগুলো মেনে নিতে প্রস্তুত থাকা। এটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আল্লাহ তায়ালা সেই ত্যাগ করার ঈমানী শক্তি, তাক্বওয়ার চেতনার শক্তি আমাদেরকে দান করুন। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন