কোরআনে বর্ণিত তালুত ও জালুতের কাহিনি

৪ সপ্তাহ আগে
আল্লাহ তাআলার নেক ও সাহসী বান্দা তালুত ছিলেন বনি ইসরাইলের বাদশাহ। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বনি ইসরাইলিরা হজরত মুসা (আ.)–এর কাছে আল্লাহর কাছে এমন দোয়া করার আবেদন জানান, যাতে আল্লাহ তাদের জন্য একজন বাদশাহ পাঠান। উত্তরে তিনি বলেন, ‘তোমরা তো তার অনুগত হবে না।’ এরপরও তাদের পিড়াপিড়িতে মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ বনি ইসরাইলিদের জন্য তালুত নামে একজনকে পাঠান।

 

পবিত্র কোরআনে তালুতের দৈহিক শক্তি এবং জ্ঞানের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে নবীর ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যায়। তারা ঠিকই তার অনুগত হতে অস্বীকৃতি জানায়। হজরত মুসা (আ.) তখন তাদের বলেন, তালুতের বাদশাহি লাভের প্রমাণ এই যে শত্রুর হস্তগত ‘তাবুতে সকিনা’ অর্থাৎ পবিত্র বস্তুসামগ্রী অচিরেই তালুতের কাছে চলে আসবে। এই ঘটনার প্রমাণ লাভের পর বনি ইসরাইলিরা তালুতের আনুগত্য স্বীকার করে।

 

পরে তালুতের নেতৃত্বে জালুতের, অর্থাৎ বাইবেলের গোলাইয়াথের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার সময় তালুত তার লোকজনকে এক চুমুকের বেশি নদীর পানি পান না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা সে আদেশ অমান্য করলে তাদের পেট ফুলে যায়।

 

আরও পড়ুন: সালাতুল হাজত যেভাবে পড়বেন

 

রণাঙ্গনে তালুত ঘোষণা করেন, জালুতকে যে হত্যা করতে পারবে, সে রাজত্বের এক-তৃতীয়াংশ পাবে এবং বাদশাহ হিসেবে তাঁর উত্তরাধিকারী হবে। হজরত দাউদ (আ.) জালুতকে হত্যা করে এই পুরস্কার অর্জন করেন।

 

পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে হাজারে হাজারে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল? তারপর আল্লাহ্ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। পরে তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। আল্লাহ তো মানুষকে অনুগ্রহ করেন; কিন্তু অনেক মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’

 

আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘তুমি কি মুসার পরবর্তী বনি-ইসরাইল প্রধানদের দেখোনি? যখন তারা নিজেদের নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন রাজা ঠিক করো যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি, সে বলল, যদি তোমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়, তবে তোমরা কি মনে কর তখন তোমরা যুদ্ধ করবে না? তারা বলল, যখন নিজেদের ঘরবাড়ি ও সন্তানসন্ততি থেকে দূরে পড়ে আছি তখন কেন আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না? তারপর যখন তাদের ওপর যুদ্ধের বিধান দেয়া হলো, তখন তাদের মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। আর আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালো করেই জানেন।

 

‘তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, আল্লাহ্ তালুতকে তোমাদের রাজা নিযুক্ত করেছেন। তারা বলল, আমরা যখন কর্তৃত্ব করার জন্য বেশি যোগ্য তখন সে কেমন করে আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করবে, আর প্রচুর ধনসম্পদও তো তাকে দেয়া হয়নি।’

 

‘সে (নবী) বলল, আল্লাহই তাকে মনোনীত করেছেন আর তিনি তাকে দেহে ও মনে সমৃদ্ধ করেছেন। অবশ্যই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময় তত্ত্বজ্ঞানী। তার কর্তৃত্বের লক্ষণ এই যে তোমাদের কাছে একটা তাবুত (সিন্দুক) আসবে, যাতে তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে প্রশান্তি ও কিছু জিনিস যা মুসা ও হারুনের বংশধরেরা রেখে গিয়েছে, ফেরেশতারা সেটা বয়ে নিয়ে আসবে। নিশ্চয়ই এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাস করো।

 

এরপর আল্লাহ বলেছেন, ‘তারপর তালুত যখন সসৈন্যে অভিযানে বের হলো তখন সে বলল, আল্লাহ একটা নদী দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। তাই যে-কেউ সেই নদী থেকে পানি পান করবে, সে আমার দলে থাকবে না, আর যে ওই পানি। পান করবে না সে আমার দলে থাকবে। এ ছাড়া যে-কেউ তার হাত দিয়ে এক আঁজলা পানি নেবে সে-ও। কিন্তু (যখন তারা নদীর কাছে গেল) তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ লোকই তার থেকে পানি পান করল । যখন সে (তালুত) ও তার সঙ্গে যারা বিশ্বাস করেছিল তারা তা পার হলো তখন তারা বলল, আমাদের (এমন) শক্তি ও সাধ্য নেই যে আজ জালুত ও তার সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করি। কিন্তু যারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিশ্বাস করেছিল তারা বলল, 'আল্লাহর অনুমতিক্রমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাস্ত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’

 

আরও পড়ুন: ইসরাফিল (আ.) কি শিঙা নিয়ে বসে আছেন?

 

তারা যখন জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হলো তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদের ধৈর্য দাও, আমাদের পা অবিচলিত রাখো ও অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।

 

‘সুতরাং তখন তারা আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের পরাজিত করল। দাউদ জালুতকে বধ করল ও আল্লাহ্ তাকে কর্তৃত্ব ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ্ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দিয়ে দমন না করতেন, তবে নিশ্চয় পৃথিবী ফ্যাসাদে পূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি মঙ্গলময়। এ সবই আল্লাহর নিদর্শন যা আমি সঠিকভাবে তোমার কাছে আবৃত্তি করছি আর তুমি তো রসুলদের একজন।’ (সুরা বাকারা ২৪৯-২৫২)

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন