কৃষককে বালু লুটকারী সাজিয়ে কারাদণ্ড দেয়ার অভিযোগ ছাতক ইউএনওর বিরুদ্ধে

৩ সপ্তাহ আগে
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর গ্রামের ধানক্ষেতে কাজ করা এক কৃষককে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সাজিয়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সিলেটের আলোচিত সাদাপাথর কাণ্ডের পর নিজেকে আলোচনায় আনার জন্য ইউএনও বারবার নিজের সীমানা অতিক্রম করে অন্য উপজেলায় ঢুকে অভিযানের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে আসছিলেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গেলো ২৮ আগস্ট। ওইদিন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর গ্রামে ধানের জমিতে চারা রোপণ করছিলেন কৃষক আব্দুল মতিন (৬৫)। অভিযানের সময় তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে চাইলে তালা ভাঙার কাজ কেন হচ্ছে, তখনই ইউএনওর নির্দেশে পুলিশ তাকে আটক করে স্পিডবোটে তুলে ছাতকে নিয়ে যায়। পরে তাকে বালু লুটকারি সাজিয়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

 

 

ভুক্তভোগীর অভিযোগ

 

কৃষক আব্দুল মতিন জানান, তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর প্রবাসে ছিলেন। দেশে ফিরে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। ঘটনার দিন নিজের জমিতে ধানের চারা লাগানোর সময় কৌতূহলবশত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রশ্ন করাই তার জন্য কাল হয়। তার ভাষায়, ‘আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম তালা ভাঙলে কী হবে, এই জন্যই আমাকে বালু লুটকারি বানানো হলো।’

 

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউএনও তাকে ছাতকের জাবুরা গ্রাম থেকে ধরা হয়েছে বলে কাগজে সই করতে বাধ্য করেন। সই না করলে রিমান্ডে নেয়ার ভয়ও দেখানো হয়। ১০ দিন সিলেটের বাদাঘাট কারাগারে ভোগের পর মুক্তি পান তিনি।

 

আরও পড়ুন: শাহ আরেফিন টিলার শত কোটি টাকার পাথর লুট, ‘ডিল করতেন ওসি’!

 

 

গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধির প্রতিক্রিয়া

 

স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আলী উদ্দিন বলেন, ‘মতিন ভাই আমাদের চেনা-জানা কৃষক মানুষ। তাকে বালু লুটকারি সাজিয়ে কারাগারে পাঠানো নিছক হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়।’

 

কোম্পানীগঞ্জের তেলিখালি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য ময়না মিয়া বলেন, ‘ছাতকের ইউএনও আইন ভেঙে সিলেটে প্রবেশ করে একজন কৃষককে ধরে নিয়ে গেছেন। যাচাই-বাছাই না করেই তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।’

 

ছাতকের সাবেক কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন সুমেন বলেন, ‘এই ইউএনও সুনাম ছড়াতে গিয়ে অভিযানের নামে নিরীহ মানুষ ও বৈধ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’

 

আরও পড়ুন: কাদের থাবায় দীর্ঘদিন লুট হলো সাদাপাথর?

 

 

প্রশাসনের বক্তব্য

 

ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশ কেবল নিরাপত্তার জন্য ইউএনওর সঙ্গে গিয়েছিল। আটক ব্যক্তি কৃষক কি না তা যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না। ইউএনওর নির্দেশেই সবকিছু হয়েছে।’

 

এ বিষয়ে ইউএনও তরিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘কৃষক কি অপরাধ করতে পারে না? আমার কাছে প্রমাণ আছে, প্রমাণের ভিত্তিতেই সাজা দেয়া হয়েছে।’ তবে বিস্তারিত কিছু বলতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন।

 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘ইউএনও তার উপজেলার বাইরে গিয়ে কাউকে আটক করতে পারেন না। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষক আপিল করলে নিশ্চয়ই ন্যায় বিচার পাবেন।’

 

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহও জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আরও পড়ুন: সাদা পাথরখেকোদের দখলে পর্যটন করপোরেশনের ৫০ একর জমি, ট্যুরিজম বোর্ডের প্রাচীর গায়েব

 

একজন নিরীহ কৃষককে বালু লুটকারি সাজিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জ জুড়ে। প্রশাসনের তদন্তের আশ্বাসের পরও ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন