আমাদের জীবন ও শরীর আল্লাহর অসংখ্য অগণিত নেয়ামতে ডুবে আছে। উচিত তো ছিলো প্রতিটি নেয়ামতের জন্য শোকর আদায় করা, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা; কিন্তু আমরা ভুলে যাই।
দৈনন্দিনের ফলফ্রুট, মাছ- গোশত ও বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার পর, পোশাক-আশাক, বসবাসের বাড়ি, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের পর,গ্যাস,পানি,তৈল,বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহার করার পর, ঔষধ,শারীরিক সুস্থতা ও বিভিন্ন কর্মের ক্ষমতার ওপর; এছাড়াও আরো অনেক নেয়ামত আছে যা আমরা গননা করে শেষ করতে পারবো না। আমরা কি এসব নেয়ামতের উপর শোকর আদায় করছি?
এছাড়া আরো বহু নেয়ামত আছে যাকে আমরা নেয়ামতই মনে করিনি! আমরা চাই আমাদের নেয়ামত বর্ধিত হোক; কিন্তু আমরা তার সঠিক পন্থা অবলম্বন করি না। আমরা চাই আমাদের নেয়ামত স্থায়ী হোক; কিন্তু তার জন্য আমারা সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি না।
অথচ আমাদের প্রভু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নেয়ামত বর্ধিত করার জন্য এবং আমাদের নেয়ামত স্থায়ী করার জন্য চমৎকার ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দিয়েছে। তা হচ্ছে শোকর ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা।
তিনি এরশাদ করেন,
وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ আর স্মরণ করুন, যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে নিশ্চয় আমার শাস্তি তো কঠোর। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত-৭)
অপর আয়াতে বলেন,
وَ مَنۡ شَکَرَ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ لِنَفۡسِہٖ ۚ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ رَبِّیۡ غَنِیٌّ کَرِیۡمٌ যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণের জন্যই করে এবং যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব। (সূরা লোকমান, আয়াত,১২)
এজন্য প্রতিটি বিষয়ে আমাদের শোকর আদায় করা অতি আবশ্যক। কিন্তু এটিও যেন আমাদের কাছে অনেক কঠিন। কর্মব্যস্ততা এত অধিক যে নিজের প্রয়োজনীয় দোয়ার কথাও ভুলে যাই।
তাই প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল এবং বিকেলের জন্য দুটি দোয়া শিক্ষা দিলেন। এদুটি দোয়া পড়ে নিতে পারলেও আমরা আমাদের নেয়ামত কে বৃদ্ধি করতে এবং স্থায়ী করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নিয়ে ইসলাম কী বলে
যেমন হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে- যে ব্যক্তি সকালে নিম্ন দোয়াটি একবার পাঠ করবে তা তার জন্য ঐ দিনের শোকর আদায় হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় একবার পাঠ করবে তা তার জন্য ঐ রাতের শোকর আদায় হয়ে যাবে।
সকালে এভাবে পাঠ করতে হবে-
اللهُمَّ مَا اَصْبَحَ بِىْ مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَ لَكَ الشُّكْرُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্ম মা আসবাহা বী মিন নি'মাতিন, আও বি আহাদিম মিন খলকিকা, ফামিংকা ওয়াহদাকা, লা শারীকা লাকা, ফালাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুকরু।
সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করতে হবে-
اللَّهُمَّ مَا أَمسى بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْك وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ فلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্ম মা আমসা বী মিন নি'মাতিন, আও বি আহাদিম মিন খলকিকা, ফামিংকা ওয়াহদাকা, লা শারিকা লাকা, ফালাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুকরু। (ইবনে হিব্বান, হাদীস-৮৬১, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৩)
লেখক: শিক্ষক, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ ঢাকা, খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ
]]>