রোববার (১ জুন) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশ দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি বাঁধ উপচে প্রবেশ করতে শুরু করে। সোমবার ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল এবং সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকে। এতে আশপাশের এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয় এবং অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
বন্যার পানি প্রবেশ করেছে জকিগঞ্জ পৌর শহরের কেছরী গ্রামের পাশ দিয়েও। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এম এ হক চত্তরসহ আশপাশের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি ও আমলশীদসহ প্রায় অর্ধশতাধিক জায়গায় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এর ফলে ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বরাতে জানা গেছে, রারাই গ্রামে প্রায় ১০০ ফুট, বাখরশাল গ্রামে ৪০-৫০ ফুট এবং লোহারমহল এলাকায় ৩০-৪০ ফুট বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এতে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল তলিয়ে গেছে।
বাঁধ ভাঙনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নদীতীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের পাহাড়ি ঢলে আখাউড়ায় সীমান্তবর্তী ১০ গ্রাম প্লাবিত
তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, এখনো পর্যন্ত স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তারা জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা বা তদারকি নেই বললেই চলে। রবিবার থেকেই পানি বৃদ্ধির বিষয়টি জানানো হলেও পর্যাপ্ত বস্তা সরবরাহ করা হয়নি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। প্লাবিত এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে এবং আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।' তবে কতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোমবার (২ জুন) বিকেলে জকিগঞ্জ পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আক্রান্ত এলাকার মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।