কুফরি আল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ

১ সপ্তাহে আগে
জীবনের জন্য আলোর প্রয়োজন। আলো ছাড়া মানুষের জীবন চলতে পারে না। তাই দিবারাত্রি চলাচলের জন্য মহান আল্লাহ চন্দ্র-সূর্যের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করেছেন। এ আলো বাহ্যিক অন্ধকারকে দূর করতে পারলেও আত্মিক অন্ধকার দূর করতে মোটেই সক্ষম নয়। এজন্য প্রয়োজন হিদায়েতের আলো।

হেদায়েতের আলো আসে ঈমান ও আমালে সালেহের পথ ধরে। আর ঈমান ও আমল জাগ্রত হয় দাওয়াতের মাধ্যেমে। যুগে যুগে নবিগণ এরপর উলামায়ে কেরামগণ মানুষকে ঈমান ও আমালের দাওয়াত দিয়ে চলেছেন অবিরাম গতিতে। এ দ্বীনী দাওয়াতের একটি মাধ্যম হলো লেখালেখি।

 

তাই আমি লেখালেখির মাধ্যমে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি। এ দেশেরে মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মীয় মূল্যবোধ, ধর্মের প্রতি দূর্বলতা এদেশের মানুষের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ইলম স্বল্পতার কারণে আমরা সহজেই বিদআত, শিরক ও কুফরির মতো ভয়াবহ গোনাহে জড়িয়ে পড়ি। নিজের অজান্তেই ঈমানের সর্বনাশ ঘটে। ঈমানের বিপরীত কুফর। ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা। ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার। মুসলমানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান।

 

ঈমান হেফাজতের জন্য কুফর সম্পর্কে জানতে হবে। ঈমান সবার আগে। ঈমান মুসলমানের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়। ঈমান শুধু মুখে কালেমা পড়ার নাম নয়, বরং ইসলামকে তার সকল অপরিহার্য অনুষঙ্গসহ মনে প্রাণে কবুল করার নাম। 

 

আরও পড়ুন: কনের ঋতুস্রাব অবস্থায় বিয়ে কি শুদ্ধ হবে?

 

আর কুফর হলো রসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক আনীত বিষয়াদি যা অকাট্য ভাবে দ্বীনের অর্থ বলে প্রমাণিত এ সবের কোনো একটি অস্বীকার করা। কাজেই আল্লাহ, নবি-রাসুল, ফিরিশতা, আসমানি কিতাব, তাকদির, কিয়ামত, আখিরাত, হাশর-নশর, জান্নাত, জাহান্নাম এবং ইসলামের অন্যান্য হুকুম-আহকাম যা কুরআন হাদিস দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত এ সবের কোনো একটি অস্বীকার করা কুফরি। কুফরি মূলত আল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।

 

আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও অন্যান্য বিধি-বিধানের প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন। যে কোনো উপায়ে যে কোনো আলামত বা চিহ্ন দ্বারা এই অবাধ্যতার প্রকাশ ঘটুক না কেন, সকিছুই হলো কুফরি। অনেক সময় আমরা এমন কথাবার্তা বলি বা এমন কাজকর্ম করি যার দ্বারা নিজের অজান্তেই ঈমান চলে যায়। তাই কথাবার্তা বলা, কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা বা বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।


কুফরির শাস্তি: কুফরি যেমন জঘন্য অপরাধ তেমনি তার শাস্তিও কঠিন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

 

নিশ্চয় যারা কুফরি করে এবং কাফির অবস্থায় মারা যায়, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফিরিশতাগণের এবং সমগ্র মানুষের লানত। এরা চিরকাল এ লানতের (জাহান্নামের) মাঝেই থাকবে। তাদের উপর থেকে আজাব কখনো লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৬১-১৬২)।

 

অন্যত্র বলেন, যারা কুফরি করে তাদের জন্য প্রস্তুত করে করা হয়েছে আগুনের পোষাক, তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, ফলে তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চামড়া গলে বের হয়ে যাবে, আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ী। যখনই তারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হইবে হবে, এবং তাদেরকে বলা হবে চেখে নাও দহন যন্ত্রণার স্বাদ (সুরা: হজ, আয়াতঃ ১৯-২২)। 

 

যারা কুফরি করে তারা চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে, কস্মিনকালেও জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না। তাদের কোনো ওজর শুনা হবে না এবং তাদের কাছ থেকে কোনো মুক্তিপণও গ্রহণ করা হবে না। মহান আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, যারা কাফির হয়েছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তারা যদি সারা দুনিয়ার সমপরিমাণ সোনাও তাদের মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চায়, তবু তা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। আর তাদের কোনো সাহায্যকারীও নেই (সুরা: আল-ইমরান, আয়াত:৯১)।


কয়েকটি কুফরি কথা ও কাজ: ১.আল্লাহ ও  তাঁর নবি-রাসুলদের গালি দেওয়া। ২. তাদের কোনো আদেশকে খারাপ মনে করা, এবং দোষ-ত্রুটি বের করা। ৩. ফিরিশতা সম্পর্কে কটূক্তি করা, এবং তাদেরকে কোনোরূপ দোষারোপ করা। ৪. কুফরি কথা বা কাজকে ভালো মনে করা। ৫. হজরত মুহাম্মাদ (সা.) কে সর্বশেষ নবি মনে করা। ৬. কারো মৃত্যুতে আল্লাহর উপর অভিযোগ করা যে, সারা দুনিয়ায় মারার জন্য কেবল একেই পেয়েছিল। 

 

৭. হারাম জিনিসকে হালাল বা হালাল জিনিসকে হারাম মনে করা। ৮. কোনো পীর-বুজুর্গ সম্পর্কে এমন বিশ্বাস রাখা যে, তিনি আমাদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বদা অবগত থাকেন। ৯. জ্যোতিষীর নিকট অদৃশ্য বিষয়াদি জিজ্ঞেস করা এবং তা সত্য মনে করা। ১০. কোনো ব্যক্তিকে লাভ-লোকসানের নিয়ন্তা মনে করা।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন