কিয়ামতের আগে ফোরাত নদী শুকিয়ে যে ঘটনা ঘটবে

১ দিন আগে
হাদিসসমূহে কিয়ামতের আগে সংঘটিত বিভিন্ন বড় ও ছোট আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব আলামতের একটি হলো মধ্যপ্রাচ্যের ফোরাত নদী শুকিয়ে গিয়ে স্বর্ণের পাহাড়ের প্রকাশ। সাম্প্রতিককালে ফোরাত নদীর পানি হ্রাস নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ।

ফোরাত নদীর পরিচয়

 

ফোরাত নদী (আরবি: نهر الفرات, নাহরুল ফুরাত) দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি তুরস্ক থেকে উৎপন্ন হয়ে সিরিয়া ও ইরাক অতিক্রম করে দজলা নদীর সঙ্গে মিশে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী তুরস্ক, সিরিয়া, ও ইরাকের জন্য পানির প্রধান উৎস। নদীটি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।  

 

আরও পড়ুন: ভোরবেলায় নবীরা যে ৬ আমল করতেন


হাদিসে ফোরাত নদীর ভবিষ্যদ্বাণী  

 

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অচিরেই ফোরাত নদী শুকিয়ে যাবে আর এর থেকে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হবে। যে ব্যক্তি সে সময় উপস্থিত থাকবে, সে যেন এর কিছুই গ্রহণ না করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১১৯)।  

 

অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফোরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, এবং প্রতিটি দলের শতকরা নিরানব্বই জন মারা যাবে। তাদের প্রত্যেকেই বলবে, ‘হায়! আমি যদি বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিটি হতাম। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৪)।  


ইসলামি স্কলারদের মতে, এই হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীকে কয়েকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। শাইখুল ইসলাম তাকি উসমানি  বলেন, ফোরাত নদীর স্বর্ণের পাহাড় দুই অর্থে হতে পারে ১. নদীর স্থানে একটি পাহাড় উঠবে, যেখানে স্বর্ণের খনি থাকবে।  ২. নদীর তলদেশে প্রচুর স্বর্ণের মজুদ উন্মোচিত হবে (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, খণ্ড: ১২, পৃষ্ঠা: ২২৮)। 

 

কিছু গবেষক হাদিসের এই স্বর্ণকে ‘কালো স্বর্ণ’ অর্থাৎ তেলের রূপক অর্থে উল্লেখ করেছেন। তবে মুহাদ্দিসগণ এরূপ ব্যাখ্যার বিরোধিতা করেছেন, কারণ হাদিসে ذهب (যাহাব) শব্দটি সরাসরি স্বর্ণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।  


সাম্প্রতিক সময় ফোরাত নদীর পানির স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ ও পানির ব্যবহারের কারণেও হতে পারে। তবে নদীর স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশের আলামত এখনো পূর্ণরূপে দেখা যায়নি। স্কলার ইবনে হাজার আসকালানি (রাহ.) বলেছেন, এই ঘটনা ইমাম মাহদির আগমনের ঠিক পূর্বে সংঘটিত হবে (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১৩, পৃষ্ঠা: ৯৬)।  

 

আরও পড়ুন: অজুতে শারীরিক যে উপকার হয়


কিয়ামতের আলামত নিয়ে গবেষণা করা আমাদের ঈমান মজবুত করার জন্য হলেও এর দ্বারা হতাশা সৃষ্টি করা উচিত নয়। রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন জীবনকে দীন অনুযায়ী চালিয়ে যেতে এবং কিয়ামতের আগমনের চিন্তায় দায়িত্ব থেকে মুক্ত না হতে।

 

ফোরাত নদী শুকিয়ে স্বর্ণের পাহাড়ের প্রকাশ একটি বড় আলামত হলেও এটি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। মুসলিম উম্মাহর উচিত হাদিসের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা ও বিভ্রান্তি এড়িয়ে সৎকর্মে মনোযোগ দেয়া।  

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন