কালো জাদুর প্রভাব ও বাঁচার উপায়

৩ সপ্তাহ আগে
আধুনিক যুগেও অনেক মানুষ কালো জাদু, বিদ্বেষণ, বশীকরণসহ নানা জাদুটোনার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কষ্ট ভোগ করছেন। এই প্রভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও ছায়া ফেলে দেয়। ইসলামে এসব বিষয় অস্বীকার করা হয়নি; বরং কোরআন ও হাদিসে এর অস্তিত্ব এবং প্রতিকারের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।

কালো জাদুর ধরণ ও তা নিরসনের প্রথমিক পদক্ষেপ

 

জাদুর প্রভাব দূর করার জন্য প্রথমে জানা দরকার, কীভাবে ও কোথায় জাদু করা হয়েছে। যদি দেখা যায়, কোনো বস্তু যেমন চুল, চিরুনি বা অন্য কিছু নির্দিষ্ট স্থানে রেখে জাদু করা হয়েছে, তবে সেই বস্তু পুড়িয়ে ধ্বংস করা জরুরি। এতে জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।

 

যদি জাদুকরকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, তবে তাকে বাধ্য করতে হবে জাদু নষ্ট করতে। ইসলামি শরিয়তে এমন জাদুকরদের কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘জাদুকরের শাস্তি হলো তরবারির আঘাতে তার গর্দান ফেলে দেয়া।’ (তিরমিজি)

 

আরও পড়ুন: নবীজিকে যেভাবে জাদু করা হয়েছিল

 

কোরআন-হাদিসে বর্ণিত চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক

 

জাদু নষ্ট করতে কোরআনের নির্দিষ্ট আয়াত, সুরা ও দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। যেমন:

 

  • আয়াতুল কুরসি
  • সুরা আরাফ, ইউনুস, ত্বহা-এর জাদু সম্পর্কিত আয়াত
  • সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস
  • রসুলুল্লাহ (স.)-এর শেখানো দোয়া: اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বা’সি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা। অর্থ: ‘হে আল্লাহ, মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী। আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ না থাকে।’ হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়ফুঁক করতেন। (বুখারি ৫৭৪২)
  • আরেকটি হাদিসে বর্ণিত ঝাড়ফুঁক: بِسْمِ الله أرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ، بِسمِ اللهِ أُرقِيكَ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক। অর্থ: আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। (মুসলিম ২১৮৬, তিরমিজি ৯৭২) এই দোয়া তিনবার পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ফুঁ দিতে বলা হয়েছে।

 

এগুলো পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ফুঁ দিলে, পানিতে পড়ে তা পান করালে এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করালে ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ হয়।

 

আরও পড়ুন: কবর জিয়ারতে যে দোয়া পড়বেন

 

বরই পাতার বিশেষ আমল

 

জাদুগ্রস্ত ব্যক্তি বা যারা দাম্পত্য জীবনে অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য বরই পাতার বিশেষ আমল রয়েছে। সাতটি কাঁচা বরই পাতা গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে তাতে উপরোক্ত আয়াত ও দোয়া পড়ে ফুঁ দিতে হয়। এরপর ওই পানি পান করতে হয় এবং অবশিষ্ট পানি দিয়ে একাধিকবার গোসল করতে হয়।

 

জাদুর বিরুদ্ধে সুরক্ষার উপায়

 

  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা
  • ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দেয়া
  • আয়াতুল কুরসি পড়া
  • দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করা

 

আরও পড়ুন: কৃতজ্ঞতা আদায়ের বিস্ময়কর দোয়া

 

জাদু যেমন বাস্তব, তেমনই তার থেকে মুক্তির উপায়ও ইসলামে স্পষ্টভাবে বর্ণিত। মুমিন ব্যক্তি কোরআনের দোয়া, ঝাড়ফুঁক, বরই পাতার আমল এবং পরহেজগারির মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করে জাদুর ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভয় নয় বরং দৃঢ় ঈমান ও আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা। কারণ, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি রক্ষা করতেও সক্ষম।

 

কোনো ভাবেই জাদু থেকে বাঁচতে কোনো কবিরাজ বা জাদুকরের কাছে যাওয়া উচিত নয়। তবে কেউ যদি কোরআন ও হাদিস দ্বারা ঝাড়ফুঁক করেন যাদেরকে রাকি বলে তাদের কাছে গেলে ভিন্ন বিষয়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন