শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকাসহ জেলার তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর তছনছ হয়ে যায়। পাশাপাশি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একইসঙ্গে গাছপালাসহ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অধিকাংশ এলাকা।
সরেজমিনে রংপুর মহানগরীর পূর্ব গিলাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিধ্বস্ত বাড়ির আঙিনায় সন্তানকে কোলে নিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলেন মীম খাতুন। কেমন আছেন? প্রশ্ন করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন মীম।
তিনি বলেন, ‘খুবই বাজে অবস্থা আমাদের। ঝড়ে আমরা সবাই ঘরে লুকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বাতাসে আমাদের থাকার ঘর ভেঙে যায়। আমরা কীভাবে বের হয়েছি জানি না। তবে ঘরের নিচে চাপা পড়েন আমার স্বামী শফিক। প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।’
আরও পড়ুন: আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড কুড়িগ্রাম, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
এ দিকে রান্না ঘর আর গোয়াল ছাড়া বাকি দুটি ঘর ভেঙে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে মীমের। স্বামীর চিকিৎসাসহ ভেঙে যাওয়া ঘর কীভাবে ঠিক করবেন, কোথায় মাথা গুঁজবেন-এ নিয়ে দুশ্চিন্তা তার।
শুধু মহানগরীর এই এলাকাই নয়, শনিবার রংপুরের গিলাবাড়ি এলাকার সুমন মিয়ার বাড়িতে ভেঙে পড়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার।

এ সময় সময় সংবাদকে সুমন বলেন, ‘আল্লাহ সহায় ছিলেন, তাই প্রাণে বেঁচে গেছি। রাতে হঠাৎ বিকট আওয়াজ করে বিদ্যুতের টাওয়ার বাড়িতে ভেঙে পড়ে। যে ঘরের ওপর পড়েছে সে ঘর একেবারে তছনছ হয়ে গেছে, একইসঙ্গে বাড়ির গাছগাছালি সব ভেঙে গেছে। ভাগ্য ভালো আমরা কেউ ওই ঘরে ছিলাম না।’
আরও পড়ুন: কালবৈশাখী ঝড় হলে কী করবেন?
তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ওকড়াবাড়ী, মাঝেরহাট, ফকিরপাড়া, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণজন, নদীরপাড়, বামনদীঘিসহ বেশ কিছু এলাকায় বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ চলছে।’
পীরগাছা উপজেলার রাজু আহমেদ জানান, তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে গেছে। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে অনেক সড়কে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন গাছ সরিয়ে নিতে কাজ করেন।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
আরও পড়ুন: কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ, নারীর মৃত্যু
রংপুর পাওয়ার গ্রিডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হোসাইন মোহাম্মদ ইসতিয়াক সময় সংবাদকে বলেন, ‘শনিবারের ঝড়ে রংপুরে নেসকোর এলাকাসহ পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ার পাশাপাশি তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে। নেসকোর আওতাধীন বেশিরভাগ লাইন সচল হলেও পল্লী বিদ্যুতের লাইনগুলো শতভাগ সচল হতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে আজ সবগুলো লাইন সচল করতে কাজ চলছে।’
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘কালবৈশাখীতে কোথায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও মাঠে কাজ করছেন।’
]]>