এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু সালেহ মো. আনসার উদ্দিনকে তদন্ত করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখানোর পর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ওসি শফিউদ্দিনকে এসি কিনে দেয়ার আড়াই মিনিটের একটি কলরেকর্ড ফাস হয় শনিবা (৫ এপ্রিল)। ওসি এবং ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেনের মুঠোফোনে কথপোকথনের ওই অডিও রেকর্ডটি মুহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
শুধু ওই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নয়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এমন অসংখ্য নিরিহ মানুষকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মোটা অংকের টাকা দিলেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউ। টাকা না দিলে দেয়া হতো মিথ্যা মামলা। এক বার নয় দফায় দফায় টাকা নিতেন রয়েছে এমন অভিযোগও।
আরও পড়ুন: ঘুষ-দুর্নীতি বেড়েছে, তাহলে কীসের সংস্কার হচ্ছে: মুরাদ
আড়াই মিনিটের ওই কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, কাশিয়ানী থানার ওসি শফিউদ্দিন কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নের বরাশুর এলাকার ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের কাছ থেকে শার্প অথবা এনার্জি প্যাক ব্র্যান্ডের ২ টনের একটি এসি কিনে দেওয়ার কথা বলেন। গোপালগঞ্জে না পাওয়া গেলে ঢাকা থেকে কিনে এনে দিতে বলেন ওসি।
এলজি-বাটার ফ্লাই কোম্পানির গোপালগঞ্জ শোরুমের মেমো থেকে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ জাকির নিজ নামে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কিস্তির মাধ্যমে এলজি ব্র্যান্ডের একটি এসি কেনেন।
ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘কাশিয়ানী থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে অসংখ্যবার শফিউদ্দিন খান আমাকে তার এক এসআই আমিনুল ইসলামসহ বিভিন্ন মানুষ দিয়ে এমনকি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মামলার হুমকি দিতেন। এসআই আমিনুল ইসলাম আমাকে বলেন, সামনে বিপদ আছে আপনার। আমি বলি, আমার অপরাধ কী? আমার নামে তো কোনো মামলা নেই, কোনো অভিযোগও নেই। তিনি বলেন, আ’লীগ করেছেন, তাদের সাথে মেলামেশা করেছেন এটাই সমস্যা। পরে এসআই আমিনুল আমাকে ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সাথে কিছু টাকাও দিয়ে আসতে বলেন, যাতে আমার কোনো সমস্যা না হয়, কোনো মামলায় জড়ানো না হয়।’
তিনি আরও বলেন, এসআই আমিনুলের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ওসিকে দিয়েছি। এরপর মাঝে মধ্যেই ওসি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বলেন—“খুব সমস্যার ভেতরে আছি, কিছু টাকা লাগবে।” এভাবে আমার কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা নেন। আমার ছোট ছোট ৪টি বাচ্চা রয়েছে, তার জন্য জেলা খাটার ভয়ে ওসিকে টাকা দিয়েছি। এতেই খান্ত হয়নি ওসি, মাঝে মাঝে তাকে বড় মাছও কিনে দিতে হয়েছে।
ইউপি সদস্য বলেন, গত ১৬ মার্চ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ার তায়েবা হোটেলে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে তিনি ২ টনের একটা এসি কিনে দিতে বলেন। আমার আর্থিক সমস্যার কথা জানালে ওসি বলেন, “আমি আপনাকে কত সাহায্য করি, আপনার নামে অনেকে অনেক কথা বলেছে; সেগুলো সেভ করে রেখেছি। যা হোক চেষ্টা করে কিনে দেন।” ভয়ে আমি এসি কিনে দেওয়ার কথা স্বীকার করি।’
আরও পড়ুন: ঘুষ নেয়ার সময় হাতেনাতে আটক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও অডিটর
জাকির বলেন, ‘আমাকে ২২ মার্চের ভেতরে এসি দেওয়ার জন্য বলেন। আমার সামর্থ্য না থাকলেও ভয়ে দিতে রাজি হই। ২৩ মার্চ ওসিকে কিস্তির মাধ্যমে একটি এসি কিনে দিই। শুধু আমি নই, কাশিয়ানীর বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৬০ লাখের বেশি টাকা নিয়েছেন তিনি। ভয়ে কেউ মুখ খোলেন না। এভাবে ভয় দেখালে বাড়িঘর বিক্রি করে ওসিকে টাকা দিতে হবে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মঠোফোনে জানান, রোববার দুপুরে কাশিয়ানী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শফি উদ্দিন খানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু সালেহ মো. আনসার উদ্দিনকে তদন্ত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।