এবার সৌদি সফরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করতে চান ট্রাম্প

২ সপ্তাহ আগে
সৌদি আরবের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বিভিন্ন অস্ত্র বিক্রি করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী মে মাসে সৌদি সফরকালে দেশটির নেতাদের কাছে এই প্রস্তাব দেবেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদন মতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে বৃহত্তর চুক্তির অংশ হিসেবে রিয়াদের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করার চেষ্টা করেন।

 

বাইডেনের প্রস্তাবে চীন থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ ও চীনা বিনিয়োগ আটকে দেয়ার বিনিময়ে অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

 

ট্রাম্পের প্রস্তাবেও এ ধরনের শর্ত রয়েছে কি না, তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ বিষয়ে জানতে হোয়াইট হাউস ও সৌদি সরকারের যোগাযোগ কার্যালয়ের কাছে মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

 

তবে প্রতিবেদন মতে, এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা এই অংশীদারিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ এবং আমরা সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে তাদের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব।’

 

আরও পড়ুন: গাজায় জাতিসংঘ কর্মীকে হত্যার কথা স্বীকার ইসরাইলের

 

সৌদি আরবকে কি ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করা হতে পারে সে ব্যাপারে দুটি সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা লকহিড মার্টিন সি-১৩০ পরিবহন বিমানসহ বেশ কিছু আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। আরেক সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, পরিবহন বিমানের পাশাপাশি লকহিড মার্টিন ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডারও দেবে।

 

এই অস্ত্র প্যাকেজে আরটিএক্স কর্পোরেশনেরও (আগের নাম রেথিওন টেকনলজিস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। পাশাপাশি এতে বোয়িং, নর্থরপ গ্রুমান ও জেনারেল অ্যাটোমিকসও অস্ত্র সরবরাহ করবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় কোনো সূত্রই নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

 

রয়টার্স বলেছে, আরটিএক্স, নর্থরপ ও জেনারেল অ্যাটোমিকস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে বোয়িং মন্তব্যের অনুরোধ করা হলেও জবাব দেয়নি। 

 

লকহিড মার্টিনের মুখপাত্র বলেছেন, বিদেশি শক্তির কাছে সামরিক উপকরণ বেচা-কেনার বিষয়টি এক সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারের সরাসরি লেনদেন। এ ধরনের কোনো বিষয় সম্পর্ক তথ্য জানতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্রগুলো জানিয়েছে,, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হতে পারেন।

 

আরও পড়ুন: ইসরাইলে দাবানল / পুড়ে ছাই ২৫০০ একর জমি, ২০ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণহীন আগুন!

 

সৌদি আরবে দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে সৌদি সফরকালে রিয়াদের কাছে ১১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দেন। তবে ২০১৮ সাল নাগাদ মাত্র সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবরে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে চুক্তিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে মার্কিন কংগ্রেস।

 

খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জেরে ২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের আমলে মার্কিন কংগ্রেস সৌদি আরবের কাছে মারণাস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সৌদি আরবকে ইয়েমেন যুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে বাধ্য করা। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া ওই যুদ্ধে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হয়।

 

মার্কিন আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিক্রির বড় চুক্তিগুলো কংগ্রেসের সদস্যদের যাচাই-বাছাই ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে পর বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। ফলে সৌদি আরবের প্রতি নমনীয় অবস্থানে যেতে বাধ্য হয় বাইডেন প্রশাসন।

 

আরও পড়ুন: মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করলো জর্ডান, সম্পদ বাজেয়াপ্ত

 

২০২৪ সালে মারণাস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন বাইডেন। লকহিডের এফ-৩৫ জেট বিমান কেনার ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর ধরে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে সৌদি আরব। এ বিষয়টি ট্রাম্পের সফরের সময় আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন