বুধবার (২০ নভেম্বর) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপরই নিজ দলের কর্মীর মামলার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এর আগে সোমবার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি করেন কফিল উদ্দিন। আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
কফিল উদ্দিন নগরের নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা। মামলার বাদী কফিল বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের কর্মী বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কফিল উদ্দীন পেশাদার ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে থানায় মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে শেখ হাসিনাসহ ৮৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
জানা যায়, ২০২১ সালের মে মাসে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে চারটি ছুরিসহ কফিল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার সঙ্গে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় কোতোয়ালি থানার দায়িত্বে ছিলেন ওসি নেজাম উদ্দিন। ছিনতাই করার সময় তাদের হাতেনাতে ধরা হয় বলে সে সময় জানানো হয়েছিল। এ ঘটনার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন। কফিল উদ্দিনের করা মামলায় এ দুজনকে ও আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামির তালিকায় থাকা অন্য পুলিশ কর্মকর্তার হলেন: ওসি মোহাম্মদ মহসিন, সিএমপির সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, পাঁচলাইশ থানার সাবেক ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা, কোতোয়ালির সাবেক পরিদর্শক সাজেদ কামাল, সাবেক ওসি জাহেদুল কবির, উপপরিদর্শক খাজা এনাম এলাহী, মো. নুর উদ্দিন, মেহেদি হাসান, মোশাররফ হোসেন, মৃনাল কান্তি মজুমদার, মমিনুল হক, আসাদুর রহমান।
এদের মধ্যে ওসি মহসিন ২০২১ সালে খুলনায় বদলি হন। আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। ওসি জাহেদুল কবিরসহ আরও কয়েকজন পুলিশ চান্দগাঁও থানায় কর্মরত আছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতাকে গুলি: শেখ হাসিনাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০২১ সালে মামলা হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। ২০২৩ সালেও গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। এসব মামলা হওয়ার সময় থানার দায়িত্বে ছিলেন ওসি মহসিন, নেজাম ও জাহেদুল কবির।
এদিকে মূলত ক্ষোভ থেকেই ও পরিস্থিতির সুযোগ বুঝে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন মামলা করা হয়েছে বলে ধারণা অনেকের।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন: সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব, মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, ওয়াসিম উদ্দিন, মোবারক আলীকেও আসামি করা হয়।
তিনি গত ৪ আগস্ট নগরের নিউমার্কেট গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। ওই দিন আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় বাকি আসামিরা গুলি করেন। ককটেল বিস্ফোরণও ঘটান। এতে কফিল উদ্দিন হাতে আঘাত পান। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তিও হন। ঘটনায় জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও সুস্থ হতে সময় লাগায় মামলা করতে দেরি হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
এ দিকে, ঢালাও মামলার বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিতেন। এখন দিচ্ছে জনগণ। তারা ১০টা নামে ৫০টা বেনামি নামে মামলা দিচ্ছেন।