গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস যতক্ষণ না গালফ অব মেক্সিকোর নাম পরিবর্তনের সাথে একমত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে তার অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনে প্রবেশাধিকার সীমিত রাখবেন।
ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদেরকে (এপির সাংবাদিকদের) ওভাল অফিসের বাইরে রাখব যতক্ষণ না তারা একমত হয় যে এটা (গালফ অব মেক্সিকো) গালফ অব আমেরিকা। আমরা এই দেশটির জন্য খুব গর্বিত এবং আমরা চাই এটি গাল্ফ অব আমেরিকা হিসেবে পরিচিত হোক।’
গত সপ্তাহে এপি জানায়, তাদের সাংবাদিককে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে দেয়া হয়নি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে যথারীতি হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন তাদের এক সাংবাদিক। কিন্তু তাকে প্রবেশে বাধা দেয়া হয় এবং জানানো হয়, তিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন: বাইডেনের আমলের সব অ্যাটর্নিকে বরখাস্তের নির্দেশ ট্রাম্পের
এরপর ওইদিন সন্ধ্যায়ই হোয়াইট হাউসের কূটনীতিক কক্ষে আরেক অনুষ্ঠানে এপির অপর এক সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ ঘটনা সামনে আসার পর তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। এপি বিষয়টাকে ‘অস্বাভাবিক ও নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেন।
এপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী সম্পাদক জুলি পেইস এক বিবৃতিতে বলেন,
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই উদ্বেগজনক যে ট্রাম্প প্রশাসন এপিকে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য শাস্তি দিচ্ছে।
‘এপি তার প্রতিবেদনে কী লিখেছে, সেটার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ওভাল অফিসে প্রবেশে বিধিনিষেধ দেয়া শুধু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের উদ্যোগই নয়, একই সঙ্গে এটি (মার্কিন সংবিধানের) প্রথম সংশোধনীরও লঙ্ঘন', যোগ করেন তিনি।
বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেন ট্রাম্প। গণমাধ্যমের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতার বিষয়টি নতুন নয়। আবাসন ব্যবসায়ী থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি তিক্ততায় জড়িয়েছেন তিনি। আবারও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে দেখা গেল তাকে।
আরও পড়ুন: অনুদান বাতিলে সায় / ‘ভারতকে কেন এত অর্থ দিচ্ছি’, প্রশ্ন ট্রাম্পের
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই গালফ অব মেক্সিকোর নাম পরিবর্তন করে গালফ অব আমেরিকা করে নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। এরপর প্রায় সব গণমাধ্যম গালফ অব মেক্সিকোর নতুন নাম লিখছে। গুগল ম্যাপ ও অ্যাপল ম্যাপে গালফ অব মেক্সিকোকে গালফ অব আমেরিকা করা হয়েছে।
গালফ অব মেক্সিতোর বেশিরভাগ অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে হলেও এর সঙ্গে মেক্সিকো ও আরও কয়েকটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। প্রায় ৪০০ বছর আগে এর নামকরণ হয় গালফ অব মেক্সিকো। ফলে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মেক্সিকো সরকার। নাম পরিবর্তন করায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধও শুরু হয়েছে।
তবে এপি জানিয়েছে, তারা গালফ অব মেক্সিকো নামটিই ব্যবহার করতে থাকবে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যম হিসেবে তারা কোনো জায়গার নাম ও ভৌগলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সর্বজনবিদিত ও বেশিরভাগ মানুষ সহজে চিনতে ও বুঝতে পারে, এমন ভাষা ব্যবহার অব্যাহত রাখবে।
এপির স্টাইলবুকেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। স্টাইলবুক মূলত একটি নীতিমালা যা সারাবিশ্বে হাজারো সাংবাদিক ও অন্যান্য লেখকরা অনুসরণ করে থাকেন। ট্রাম্প তার মন্তব্যে সংবাদামাধ্যমটির এই অবস্থানের সমালোচনা করে বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস আইন মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।’
আরও পড়ুন: ‘আমার সঙ্গে তর্ক নয়’, ভারতকে কড়া বার্তা ট্রাম্পের
ট্রাম্পের এই মন্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এপি। বলেছে, কোনো আইনই এপিকে তাদের পছন্দের স্টাইল বেছে নিতে বাধা দিতে পারে না। এপির মুখপাত্র লরেন ইস্টন মঙ্গলবার বলেন,
বিষয়টা এমন যে সরকার জনসাধারণ ও সংবাদমাধ্যমকে বলে দিচ্ছে, কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না। আর যদি তারা সরকারি আদেশ না মানে তবে প্রতিশোধ নেয়া হবে।
এপির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণকে 'সাংবিধানিক অধিকার’ লঙ্ঘন হতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পেন আমেরিকার জার্নালিজম অ্যান্ড মিসইনফরমেশান প্রোগ্রামের পরিচালক টিম রিচার্ডসন বলেছেন,
এপির সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে। এই সংশোধনী মতে, সরকার সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন হোয়াইট হাউসের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়ে এই বিধিনিষেধ বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ইউজিন ড্যানিয়েলস বলেছেন,
সংবাদমাধ্যমে কীভাবে সংবাদ লেখা হবে, সেটা হোয়াইট হাউস বলে দিতে পারে না। কোনো সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকের সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলেও সেই সংবাদমাধ্যমকে শাস্তি দেয়ার কোনো এখতিয়ার হোয়াইট হাউসের নেই।
আরও পড়ুন: সব জায়গায় সন্তানদের সঙ্গে রাখেন ইলন মাস্ক, কারণ কী?
]]>