জনমনে প্রশ্ন, বছরের ব্যবধানে তবে কি ফাটল ধরেছে দলগুলোর ঐক্যে। যদিও বিভিন্ন ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানকে বড় ধরনের বিভেদ নয়, বরং মতভিন্নতা হিসেবেই দেখছেন নেতারা। তাদের মতে, দলগুলোর কর্মসূচি-নীতি-এজেন্ডায় ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। আর গণতান্ত্রিক সেই মূল্যবোধের প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক মাঠে।
তবে বিভেদ-অনৈক্য বাড়লে যে নতুন সংকটে পড়বে দেশ, এমনটা মনে করেন রাজনৈতিক নেতারাও। তাই বাড়ছে ঐক্যের তাগিদও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিটি দলের নিজস্ব দর্শন ও চিন্তা-ভাবনা রয়েছে, দূরত্বের কিছু নাই। এজন্যই ভিন্ন ভিন্ন দল হয়েছে। যে জায়গাগুলোতে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব, সেখানে হবে। এর বাইরে যেটা বাকি থাকবে, সেটা নিয়ে জনগণের কাছে সবাইকে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয় নিয়ে ঐকমত্য হবে না, সেটা নিয়ে দর কষাকষিতে সময় নষ্ট করলে গণতন্ত্র অসম্ভবভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচিত সংসদ সরকার ছাড়া আগামী দিনের বাংলাদেশের কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
আরও পড়ুন: দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন এখনও অধরা: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তথ্য ও পলিসি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক থাকবে। ভালো কাজগুলো জনগণের কাছে কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেই বিষয়গুলো এনসিপির প্রধানতম এজেন্ডা হয়ে উঠবে। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতার জায়গা থাকবে। কিন্তু সেটা যেন বিদ্বেষের স্থানে নিয়ে চর্চা না হয়, সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু সেটা যেন পেশিশক্তি নির্ভর না হয়। দেশের প্রশ্নে, জনগণের স্বার্থে যদি দলগুলো একসুরে কথা না বলতে পারে, তাহলে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন পেছানো হলে দেশ অবনতির দিকে যাবে: খসরু
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘দল ভিন্ন হলে মতদ্বৈধতা থাকবে স্বাভাবিক। তবে এ যেন মতবিরোধে পরিণত না হয়। সে জায়গায় যদি আমরা সবাই দায়িত্বশীল হতাম, তাহলে মতবিরোধ বা পাল্টাপাল্টি আক্রমণের জায়গাটা এড়িয়ে যাওয়া যেত।’
বড় ধরনের সংকটের জন্ম না দেয়াই কাম্য উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা এখান দেশ নির্মাণের পথে এগুতে চাই। সংকট বা মহাসংকটের দিকে দেশ যাতে আবার ধাবিত হতে না পারে এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি দিয়ে আমাদেরকে মাঠে প্রতিযোগিতা করতে হবে। এখন অশুভ প্রতিযোগিতা ভালো শোভন আনবে না।’
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজ যেখানে সংগ্রাম হবে সেখানে: জামায়াতের নায়েবে আমির
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সংকটের সমাধান না করলে সেটা আরও বড় হয়ে যেতে পারে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অন্যকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এ জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অথবা বড় দল হিসেবে বিএনপির দিক থেকেও ঐক্যের জন্য একটা চেষ্টা হতে পারে।’
মত-পথের ভিন্নতা থাকবেই, তবে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই বিশ্লেষক।
]]>