শুধু এই টাকাই নয়, গেল কয়েকদিনের ভেতর আরো দুইবার মানুষের কয়েক লাখ হারানো টাকা পান অটোরিকশা চালক উজ্জ্বল। প্রতিবারই মালিককে খুঁজে ফেরত দিয়েছেন টাকা। তার এই সততা ও নিঃস্বার্থ কাজের প্রশংসা এখন সবার মুখে মুখে।
গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ভেলানগর গ্রামে বাজার থেকে ফেরার পথে একটি টাকার ব্যাগ পান উজ্জ্বল। পরে মালিককে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকেন তিনি। না পেয়ে টাকাগুলো এক দোকানে গচ্ছিত রেখে আশপাশের এলাকায় নিজ খরচে করেন মাইকিং। পরে মালিকের খোঁজ মিললে শুক্রবার (১ আগস্ট) গ্রামবাসীর মাধ্যমে সেই টাকা ফিরিয়ে দেন তিনি।
হারানো টাকা ফিরে পেয়ে আনন্দে অনেকটা আত্মহারা পাশের গ্রামের বিফলা মেম্বার। তিনি বলেন, ‘এই টাকার আশা আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম। এভাবে যে কেউ এতোগুলো টাকা পেয়ে ফিরিয়ে দিবে তা কল্পনারও বাইরে। ব্যাগে ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা ছিল। উজ্জ্বলের এমন সততার প্রশংসা করার ভাষা আমার নেই। তবে আমি তাকে আজীবন ছেলের মতো দেখবো।’
আরও পড়ুন: গায়ে ‘ময়লা’ ছিটিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা চুুরি, দুই বছর পর চোর গ্রেফতার
স্থানীয় বাসিন্দা ডা. কাউসার বলেন, টাকাগুলো পেয়েই উজ্জ্বল আমাদেরকে জানায়। পরে প্রকৃত মালিককে খুঁজে পেয়ে টাকা ফেরত দেয়া হয়। এমন নির্লোভ ছেলে আমাদের সমাজে অনেক বিরল। তার এমন সততা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এই টাকা ফেরত দেয়ার ঠিক পনেরো দিন আগে উজ্জ্বলের অটোরিকশায় একটি ব্যাগে দেড়লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেলে যান এক যাত্রী। সেই টাকাও যাত্রীকে খুঁজে ফেরত দেন তিনি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রশসংসায় ভাসেন উজ্জ্বল।
এরও আগে একব্যক্তির হারানো মোবাইল ও কিছু ফেরত দিয়েছেন এই অটোরিকশা চালক।
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখন নৈতিকতার অভাব সবচেয়ে বেশি। কার টাকা কে মেরে খাবে সেই চিন্তা। কিন্তু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। পরপর কয়েকবার অনেকগুলো টাকা পেয়ে সে ফিরিয়ে দিয়েছে। এতো টাকার লোভ তার মতো ছেলে এই বয়সে সামলানোর কথা না। অন্য আরেকজনের সম্পদ হয়তো উজ্জ্বলের হাতেই নিরাপদ, তাই বার বার তার হাতেই টাকাগুলো পড়ে। উজ্জ্বল আমাদের সমাজের আদর্শ, তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে সবার।’
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আট লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার আরও ২
টাকা পাওয়া আর ফেরত দেয়া বিষয়ে জানতে চাইলে উজ্জ্বল মুচকি হেসে বলেন, ‘আরেকজনের টেহা (টাকা) আমার কাছে রাখমু কেন? এই টেহা হয়তো কারোর জীবন-মরনের প্রশ্ন হইতে পারে, যা না পাইলে সেই পরিবারটা ধ্বংস হইতে পারতো! যা আমার না, তা আমার বইলা ভোগ করাডা মনের অশান্তি বাড়াইবো, তাই যারডা তারেই দিয়া দেই।’