এক বুক হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন দর্শকরা

৩ সপ্তাহ আগে
দর্শকদের বলা হয়ে থাকে ফুটবলের প্রাণ। দেশের ফুটবলের সেই প্রাণ কেবলই জেগে উঠেছে, কেউ দুপুরে না খেয়ে খেলা দেখতে আসেন, আবার কেউ-বা ৩৫ বছর পর এসেছেন ফুটবল মাঠে। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই হার দর্শকদের ঠিক কতটা আঘাত করেছে, তা হয়তো অনেকেই উপলব্ধি করতে পারবেন না। কেবল ফুটবল ভক্তরাই বুঝে এই আঘাতের যন্ত্রণা ঠিক কতটা।

রেফারির শেষ বাঁশি, তখনো গ্যালারিতে বাংলাদেশ বাংলাদেশ প্রতিধ্বনি। ২-১ গোলে হারের পর দর্শকদের এমন আওয়াজ দেশের ফুটবলের জেগে উঠা প্রাণ তো বটেই। তবে হারের পর এমন প্রতিধ্বনি হয়তো নিজেই নিজেদের বৃথা সান্ত্বনা দেওয়া।  

 

ম্যাচ শুরুর আগেও দর্শকদের চিত্র ছিল বিস্ময়কর। দুপুর তখন ঠিক ২টা, জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রত্যেকটা গেইটে দর্শকদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। দর্শকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ম্যাচ সন্ধ্যা ৭টায় শুরু, তবে তাদের অনেকে গেটের সাড়িতে দাঁড়িয়েছেন সকাল ৭টা থেকেই।  

 

৪ নম্বর গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নারী দর্শক সময় সংবাদকে জানান, একাই এসেছেন সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে। হামজা চৌধুরীর খেলা দেখতে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গরমে ক্লান্তি লাগছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারলে এই ক্লান্তিটা আর থাকবে না। আরও এক দর্শক জানান, গেটের লাইনে দাঁড়ান সকাল সাড়ে ১১টায়। দুপুরের খাবার না খেয়েই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে হবে।   

 

আরও পড়ুন: দেশ ছাড়ার আগে যা বললেন হামজা

 

প্রত্যেক দর্শকের গল্প প্রায় একইরকম। তবে কিছু গল্পে ভিন্নতা পাওয়া যায়। ক্লাব নাইন্টি নামের একটি সংগঠনের কিছু সদস্য এসেছেন হামজা চৌধুরীর ছবি সম্বলিত টিশার্ট গায়ে দিয়ে। বিশেষত্ব জানতে চাইলে ওই ক্লাবের এক সদস্য জানান, তিনি হামজা চৌধুরীর জন্য মাঠে জাতীয় দলের ফুটবল খেলা দেখতে এসেছেন ৩০-৩৫ বছর পর। আরও একজন জানান, তিনি এসেছেন ২০ বছর পর। 

 

দর্শকের এমন বাঁধভাঙা জোয়ারের পরও, ম্যাচের প্রথর্মাধ শেষে গ্যালারিতে ভিন্নচিত্র দেখা যায়। প্রত্যেক গ্যালারির সামনের অনেকগুলো আসন ফাঁকা পড়ে আছে। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সময় সংবাদ জানতে পারে, অনেক দর্শক মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। কারণ নির্ধারিত সময়ে তারা আসেননি। বাফুফে থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, ৫টার পর জাতীয় স্টেডিয়ামের সকল গেইট বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

 

ম্যাচের আগে গেইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি কিছু দর্শক, ক্ষোভও ঝেড়েছেন তারা। টিকেট হাতে নিয়ে গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা জানান, ম্যাচের আগে তারা আসলেও প্রবেশ করতে পারেননি, প্রশ্ন ছুড়ে দেন বাফুফে তো টিকেটের গায়ে প্রবেশের সময় লিখে দেয়নি, আমরা তবে কেন প্রবেশ করতে পারবো না? অবশ্য পরে অনেক দর্শক গেটের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে মাঠে প্রবেশ করেছেন। 

 

আরও পড়ুন: বিতর্কিত রেফারিং নিয়ে এএফসির কাছে অভিযোগের কথা ভাবছে বাংলাদেশ

 

ফুটবল উন্মাদনার সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া এই দর্শকরাও ম্যাচ শেষে বের হয়ে গেছেন নীরবে। ম্যাচ শেষে যখন দর্শকরা বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঢাকার আকাশে কালো মেঘ নেমে আসে। একটু পর বৃষ্টিও নামে। দর্শকদের চোখের পানি ও বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যান দর্শকরা। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় অনেক দর্শকই হারের কারণ হিসেবে ম্যাচ রেফারিকে দায়ী করেছেন।   

 

অবশ্য দর্শকদের কষ্ট বেশ ভালোভাবেই বুঝেছেন ফুটবলাররা। এমন হারের পর ম্যাচ শেষে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন রাকিব হোসেন। দর্শকদের হতাশ করার বিষয়টি স্বীকার করে এই ফুটবলার বলেছেন, ‘সকলে যেটি (বাংলাদেশের জয়) চেয়েছিলেন, সেটি হয়নি। আশা করি দর্শকরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। সামনে হংকং ম্যাচ রয়েছে, সেখানে ভালো কিছু হবে আশা করি।’ 

 

এই হার কী দর্শকের ফুটবল উন্মাদনা কমিয়ে দেবে? ম্যাচ শেষে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করেছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করিমের কাছে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না। শেষ পর্যন্ত দর্শকরা সমর্থন দিয়েছে। এখনো দর্শকরা আছে। আমার মনে হয় না, একটি ম্যাচের ফলাফল দিয়ে ফুটবলের প্রতি যে মানুষের ভালোবাসা তা কমে যাবে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন