এক বছরে শ্রমশক্তির বাইরে ১৬ লাখের বেশি নারী, নেপথ্যে কী?

৪ ঘন্টা আগে
বাড়ছে জনসংখ্যা; সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। তবে শ্রমশক্তি কমছে। সেখানে নারীর অবস্থান আরও নাজুক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গবেষণা বলছে, এক বছরে ১৬ লাখের বেশি নারী শ্রমশক্তির বাইরে চলে গেছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদরা।

চাকরি না সংসার, আগে কোনটা? এমন প্রশ্নে হরহামেশাই কাঠগড়ায় দাঁড়ায় নারীর ইচ্ছা। পরিবারের সবার ভালো থাকা আর সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্যারিয়ারে দাড়ি টানতে বাধ্য হন কর্মজীবী নারী। ফারজানা আলম লিনা নামে এক নারী বলেন, মা হওয়ার পরে দেখছি, পরিবারের অনেক সদস্যই আমার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানটির দায়িত্ব নিচ্ছেন না ভালোভাবে। পাশাপাশি সন্তানকে কাজের স্থানে নিয়ে যাওয়ারও পরিবেশ থাকে না। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ফারজানা রহমানের গল্পটাও কিছুটা এমনই। সুইডেন থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এসেও তিনি শুরু করতে পারেননি কর্মজীবন। সংসারই তার দিনরাতের কর্মযজ্ঞের কেন্দ্র।

 

তিনি বলেন,

দুটো সন্তানকে লালনপালন করার পাশাপাশি পুরো সংসারের দেখাশোনা করতে হয়। কখনও মনে হয় না আমি নিজের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছি, কখনও হয় ওয়াইফের দ্বায়িত্ব পালন করছি, আবার কখনও মায়ের।

 

আরও পড়ুন: আমার মনে হয় না আলাদা পিতৃত্বকালীন ছুটি দরকার আছে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীদের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেয়ার পর ২০ থেকে ৩০ শতাংশই আর কাজে ফিরতে পারেন না। তৈরি পোশাক খাতে এ হার ৮০ শতাংশের ওপরে। এর কারণ হিসেবে পারিবারিক চাপ, পরিবহন সুবিধার অভাব এবং বিরূপ কর্মপরিবেশকে দায়ী করা হয়েছে।

 

নারীরা জানিয়েছেন, স্বামী কাজ করলে অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীকে বাসায় থাকতে হয়। কারণ সংসার দেখাশোনা করার জন্য কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হয়। আবার অনেক সময় বাইরে কাজ করতে বাধা দেয় পরিবারই।

 

এর মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে শ্রমশক্তির বাইরে চলে গেছে ১৭ লাখ ২০ হাজার কর্মক্ষম মানুষ। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৩০ হাজারই নারী। কৃষি, শিল্প ও সেবা-সব খাতেই নারীর অর্থনৈতিক অবদান কমেছে। পাশাপাশি শিক্ষিত নারী বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। শ্রম অধিকার কর্মীরা এই পরিস্থিতির মূল দায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরই দিচ্ছেন।

 

আরও পড়ুন: ‘নারী-পুরুষ একসঙ্গে চলতে পারলে মানবতার জয় হবে’

 

গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, নারী যে কমিউনিটি বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে, তাদের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায়িত্বও রয়েছে। এছাড়া কলকারখানা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নারীরা অংশগ্রহণ ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা, সেটি রাষ্ট্রকে তদারকি করতে হবে।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে নারীরা শ্রমশক্তি থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।

 

অর্থনীতিবিদ ড. অনন্য রায়হান বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে, যা নারী শ্রমশক্তি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। অনেকে আবার বাইরে কাজ করার চেয়ে সংসারের কাজে মনোনিবেশকেও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

 

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের শ্রমশক্তি বাড়াতে এবং বেকারত্ব কমাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন