উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, কোথায় যাচ্ছেন তারা?

২ দিন আগে
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, যা প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। দেশের মোট ভূমির প্রায় ৩২ শতাংশ জুড়ে রয়েছে এবং জনসংখ্যার প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ এই অঞ্চলে বাস করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে এই এলাকাগুলোতে বসবাস ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মানুষ দেশের অন্যান্য স্থানে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ও রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:

উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, যেমন:

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা: ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

লবণাক্ততার বৃদ্ধি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লবণাক্ত পানি ভেতরের জমিতে প্রবেশ করে, যা কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস করে। আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (IFPRI) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি লবণাক্ততার সমস্যায় ভুগছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, যা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

নদী ভাঙন: ‘যমুনা-মেঘনা নদী ভাঙন নিরসন প্রকল্প’ শীর্ষক এডিবির একটি নথিতে বলা হয়েছে, প্রধান নদীগুলোর তীরবর্তী আনুমানিক ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার জায়গা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১০ হাজার হেক্টর জমি ভাঙনের কবলে পড়ে। যার প্রভাব পড়ছে এক লাখেরও বেশি মানুষের ওপর।

 

আরও পড়ুন: বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা, বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

 

মানুষের স্থানান্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবগুলোর কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ জীবিকা ও নিরাপত্তার খোঁজে দেশের অন্যান্য স্থানে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভিটেমাটি হারানো বাংলাদেশির সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩৩ লাখে পৌঁছাতে পারে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মোট উদ্বাস্তু জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ। আইডিএমসির সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল রিপোর্ট অন ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্টে বলা হয়েছে, গত বছর (২০২৪) অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শীর্ষে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে পঞ্চম। তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

 

উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ মূলত ঢাকা এবং উত্তরবঙ্গে তাদের স্থান পরিবর্তন করছে।

উত্তরবঙ্গে স্থানান্তরের কারণ: ঢাকা দেশের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় অনেকেই সেখানে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। তবে, উত্তরবঙ্গে স্থানান্তরের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে:

১. সুপেয় পানির প্রাপ্যতা। 
২. জমির প্রাপ্যতা: উত্তরবঙ্গে তুলনামূলকভাবে জমির প্রাপ্যতা বেশি এবং জমির মূল্যও কম, যা কৃষি কাজের জন্য উপযুক্ত।
৩. জীবনযাত্রার খরচ: ঢাকার তুলনায় উত্তরবঙ্গে জীবনযাত্রার খরচ কম, যা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য আকর্ষণীয়।
৪. পানির প্রাপ্যতা ও পরিবেশ: উত্তরবঙ্গে পানির প্রাপ্যতা তুলনামূলকভাবে ভালো এবং পরিবেশও অনুকূল, যা কৃষি ও বসবাসের জন্য সুবিধাজনক।

 

আরও পড়ুন: বায়ূ দূষণ নিয়ন্ত্রণে একশন প্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে: রিজওয়ানা

 

ঢাকার বস্তিতে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের সংখ্যা: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা ১৮ লাখ ৪৮৬ জন।  ঢাকার বস্তিগুলোতে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার বস্তির প্রায় ৪০% বাসিন্দা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আসা। তবে, প্রতি বছর এই সংখ্যা কতটুকু বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মানুষের স্থানান্তর একটি গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ এবং স্থানান্তরিত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর নীতি গ্রহণ করা জরুরি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন