জানা গেছে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশন বা প্রতিটি রুটে নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে বাস চলাচলের প্রকল্প নিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তিন বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মোহাম্মদপুর থেকে ঘাটারচর পর্যন্ত নগর পরিবহন চালু হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আড়ালে হারিয়ে যায় এই সেবা।
রাজধানীর গণপরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে নিয়ম মেনে বৈঠক করত বাস রুট রেশনালাইজেশন সংক্রান্ত কমিটি। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর এখন তাও বন্ধ।
তবের যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো, যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনারোধে বাস রুট রেশনালাইজেশনকে পাশ কাটিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি চালু হয় কাউন্টার ভিত্তিক নির্দিষ্ট রঙের বাস চলাচল। প্রথম রুট হিসেবে আবদুল্লাপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করা সব বাসের রং নির্ধারণ করা হয় গোলাপি। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে এ ব্যবস্থাও।
সব জায়গায় নেই কাউন্টার, তাই ই-টিকিটিং ব্যবস্থাও চালু হওয়ার আগেই বন্ধ। আর যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা যেন অধিকার। সঙ্গে বাড়তি ভাড়া আর একে অপরকে দোষারোপ তো আছেই।
যাত্রীরা বলছেন, ই-টিকিটিং পদ্ধতি রাজধানীবাসীকে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু পরিবহনের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রাজধানীতে যাতায়াতে যাত্রীরা এখন হতাশ। এ অবস্থায় পরিবহন শ্রমিকদের মানিসক পরিবর্তন কখনোই ঘটবে না।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্যমতে, বাস রুট রেশনালাইজেশনে সচল রুটের সংখ্যা ৯৫টি। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে ১১০টি। আর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের জরিপে রুট হলো ৬০টি। তিনটি পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে বাস চলাচলে এখন পর্যন্ত ৪২টি রুট নির্ধারণ করেছে ডিটিসিএ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পে মালিকপক্ষের সুবিধার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। নতুন বাস কিনতে কোনো সরকারি সহায়তার আশ্বাস মিলছে না।’
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণহীন গোলাপি বাস, যাতায়াত নিয়ে ফের হতাশায় রাজধানীবাসী
এরপরও ২৩টি কোম্পানির বাস রেশনালাইজ করে মাস দুয়েকের মধ্যে চালুর আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে বাস রুট রেশনালাইজেশনের প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম জানান, ‘বাসগুলোর মিনিমাম একটা স্ট্যান্ডার্ড রাখতে চাচ্ছি। তবে বাস যুক্ত করার শর্তগুলো কঠিন। এগুলো না মানলে নতুন বাস আনা যাচ্ছে না। ১০০টি রুট থেকে ৫০ বা ৬০টি রুটে নামিয়ে আনা, এখানেই বাসের কোম্পানিগুলোকে মিলিয়ে দেয়া কঠিন।’
ডিটিসিএর প্রকল্প পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘রুট কোনটা হবে হবে না, এটা নিয়ে আমরা মতামত দিচ্ছি পাশাপাশি মালিকরাও মতামত দিচ্ছে। তবে একটি রুটে একটি কোম্পানির বাস চলাচল করলে সবচেয়ে ভালো হবে। আমরা এই পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছি।’
পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, নগর পরিবহন নিয়ে ১৫ বছর ধরে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। এর মানে হলো, সরকারের সদিচ্ছার বড় একটা অভাবের জায়গায় রয়েছে। পাশাপাশি মালিকরাও এখানে সহযোগিতা করছে না বলে মনে হয়। বাস রুট রেশনালাইজেশনে আসতে হলে মালিকদেরও কিছু সুবিধা দিতে হবে। তাদের আলাদা করে বাস চলাচলের জন্য ভালো রাস্তা দিতে হবে। ওই রুটে যাতে অন্য কোনো গণপরিবহন আসতে না পারে সেই নিশ্চিয়তা দিতে হবে। অবৈধ যান বন্ধ করতে হবে। এছাড়া যাত্রী ছাউনিগুলোর ভালো ম্যানেজমেন্ট করতে হবে।
]]>