উত্তরাধিকার বিধানে ন্যায়ের আলোকে পারিবারিক সম্পদের সুষম বণ্টন

৩ সপ্তাহ আগে
ইসলামি উত্তরাধিকার আইন মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যায্য ও সুশৃঙ্খল সম্পদ বণ্টনের একটি উদাহরণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর প্রাপ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে কারো প্রতি অবিচার না হয়। সুরা আন-নিসার ১২ নম্বর আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পদ বণ্টন, সন্তান ও ভাইবোনের অবস্থানসহ বিভিন্ন পারিবারিক উত্তরাধিকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই আয়াত আমাদের শেখায় কিভাবে পরিশুদ্ধভাবে ওসিয়ত ও দেনা পরিশোধের পর উত্তরাধিকার বণ্টন করতে হয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, 

 

وَلَکُمۡ نِصۡفُ مَا تَرَکَ اَزۡوَاجُکُمۡ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّہُنَّ وَلَدٌ ۚ  فَاِنۡ کَانَ لَہُنَّ وَلَدٌ فَلَکُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَکۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصِیۡنَ بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ  وَلَہُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَکۡتُمۡ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّکُمۡ وَلَدٌ ۚ  فَاِنۡ کَانَ لَکُمۡ وَلَدٌ فَلَہُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَکۡتُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ تُوۡصُوۡنَ بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ؕ  وَاِنۡ کَانَ رَجُلٌ یُّوۡرَثُ کَلٰلَۃً اَوِ امۡرَاَۃٌ وَّلَہٗۤ اَخٌ اَوۡ اُخۡتٌ فَلِکُلِّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا السُّدُسُ ۚ  فَاِنۡ کَانُوۡۤا اَکۡثَرَ مِنۡ ذٰلِکَ فَہُمۡ شُرَکَآءُ فِی الثُّلُثِ مِنۡۢ بَعۡدِ وَصِیَّۃٍ یُّوۡصٰی بِہَاۤ اَوۡ دَیۡنٍ ۙ  غَیۡرَ مُضَآرٍّ ۚ  وَصِیَّۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ  وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَلِیۡمٌ ؕ

 

অর্থ: তোমাদের স্ত্রীগণ যা-কিছু রেখে যায়, তার অর্ধাংশ তোমাদের যদি তাদের কোনও সন্তান (জীবিত) না থাকে। যদি তাদের কোনও সন্তান থাকে, তবে তারা (যে) ওসিয়ত (করে যায় তা) কার্যকর করার এবং যে দেনা রেখে যায় তা পরিশোধ করার পর, তোমরা তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর তোমরা যা-কিছু ছেড়ে যাও, তার এক-চতুর্থাংশ তারা (স্ত্রীগণ) পাবে যদি তোমাদের (জীবিত) কোন সন্তান না থাকে। 

 

আরও পড়ুন: জুমার দিন মসজিদে হেঁটে গেলে প্রতি কদমে যতো নেকি

 

যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তোমরা যে ওসিয়ত করে যাও তা কার্যকর করার এবং (তোমাদের) দেনা পরিশোধ করার পর তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ পাবে। যার মীরাছ বণ্টন করা হচ্ছে, সেই পুরুষ বা নারী যদি এমন হয় যে, না তার পিতা-মাতা জীবিত আছে, না সন্তান-সন্ততি আর তার এক ভাই বা এক বোন জীবিত থাকে, তবে তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্য এক-ষষ্ঠাংশ। তারা যদি আরও বেশি সংখ্যক থাকে, তবে তারা সকলে এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে অংশীদার হবে, (কিন্তু তা) যে ওসিয়ত করা হয়েছে তা কার্যকর করার বা দেনা পরিশোধ করার পর যদি (ওসিয়ত বা দেনার স্বীকারোক্তি দ্বারা) সে কারও ক্ষতি না করে থাকে। (এসব) আল্লাহর হুকুম। আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত, সহনশীল।
 

এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য যে, যদিও মীরাছ বণ্টন করার আগে দেনা পরিশোধ ও ওসিয়ত পূরণ করা জরুরী, কিন্তু মৃত ব্যক্তির এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়, যার উদ্দেশ্য বৈধ ওয়ারিশদের ক্ষতি সাধন করা।

 

যেমন কোনও ব্যক্তি তার ওয়ারিশদেরকে বঞ্চিত করার বা তাদের অংশ হ্রাস করার লক্ষ্যে তার কোনও বন্ধুর অনুকূলে ওসিয়ত করল কিংবা তার অনুকূলে মিথ্যা ঋণের কথা স্বীকার করল, যাতে তার গোটা সম্পত্তি বা তার সিংহভাগ সেই ব্যক্তির দখলে চলে যায় আর ওয়ারিশগণ কিছুই না পায় অথবা পেলেও তার পরিমাণ খুব সামান্যই হয়। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এজন্যই শরীয়ত এই মূলনীতি প্রদান করেছে যে, কোনও ওয়ারিশের পক্ষে ওসিয়ত করা যাবে না এবং যে ওয়ারিশ নয় তার পক্ষেও সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করা যাবে না।

 

এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, ইসলাম শুধুমাত্র ইবাদতের ধর্ম নয়, বরং জীবনের প্রতিটি দিক, পারিবারিক, আর্থিক, সামাজিক, সব কিছুতেই একটি পূর্ণাঙ্গ ও ভারসাম্যপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। উত্তরাধিকার আইন একটি ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিবারে সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। তাই এ বিষয়ে মুসলিম সমাজের প্রত্যেকের সচেতন থাকা এবং আল্লাহর নির্ধারিত বিধান মোতাবেক সম্পদ বণ্টন করা অত্যন্ত জরুরি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন