ঈদের দিনেও চুলায় মাছ-ভর্তা, মাংস জোটেনি উপকূলের ছিন্নমূল পরিবারে

৩ সপ্তাহ আগে
নাম তার ঝুমুর বেগম। বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু মুখের রেখা দেখে মনে হয় বয়স চল্লিশ ছাড়িয়েছে। নদীর ওপর ছোট্ট নৌকায় তার সংসার—স্বামী আর চার সন্তান নিয়ে।

ঈদের দিন সকালে চুলায় হাঁড়ি চাপালেও, তাতে নেই মাংস, নেই পোলাও। নদী থেকে ধরা ছোট মাছ আর আলু ভর্তা দিয়েই ঈদের দিনের রান্না সারা। ঈদের সকালে যখন বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা হাওয়া নদীর বুক ছুঁয়ে বয়ে যায়, তখন সেই হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকে অভাবের দীর্ঘশ্বাস।


চোখের কোণ শুকনো রাখতে পারেন না ঝুমুর। কান্নজড়িত কন্ঠে ঝুমুর বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাগো ঈদ নাই। কিন্তু কষ্ট লাগে পোলাপান গুলার লাইগা। পোলাপানরে এক টুকরো গোস্ত খাওয়াইতে পারলাম না। ওরা খালি জিগায়, মা, ঈদের গোস্ত  কই?’


এই গল্পটা কেবল ঝুমুর বেগমের একার নয়। পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে হাজারো মানুষ—জেলে, কৃষক, দিনমজুর কিংবা ছিন্নমূল পরিবার—এমনই বাস্তবতার মধ্যে কাটিয়েছেন কোরবানির ঈদ।
কারও ঘরে হয়নি কোরবানি, আবার অনেকের পক্ষেই ছিল না বাজার থেকে এক কেজি মাংস কেনার সামর্থ্য। ফলে সন্তানের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দেওয়ার সামান্য সুখটুকুও অধরা থেকেছে অনেকের জন্য।

আরও পড়ুন: ঈদের মাংস রান্নায় প্রথম পছন্দ চুইঝাল, চাহিদা তুঙ্গে

নদীতে বসবাসকারী মান্তা সম্প্রদায়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। তাদের নেই স্থলভাগের প্রতিবেশী, নেই ভাগ করে দেওয়ার সংস্কৃতি। আশপাশের সবাই দরিদ্র। যার ঘরে নিজেই খেয়ে না-পাওয়া, সে আর কাকে দেবে?


পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা মান্তা সম্প্রদায়ের বাসিন্দা সোহেল মাঝি বলেন, ‘ঈদের দিন আর অন্য দিনের তফাত কি! হুদা নামডা আলাদা। মাংস তো দূরের কথা, গন্ধটাও নাই। সকালে নদী থেইকা মাছ ধরছি, খালি হেই মাছ আর আলু ভর্তা রান্না করছি। দুপুর খাইয়া আবার  নদীতেই নামছি মাছ ধরতে।  ঈদের দিনও আমরা নৌকা চালাই। আমাগো ঈদ-কুরবানি নাই ।’


ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু এই প্রান্তিক মানুষদের কাছে ঈদ কেবল ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ। উৎসবের সেই আনন্দ যেন নদীর ওপারে থেমে থাকে, তাদের ছুঁয়েও যায় না।


নদীর ঢেউ জানে তাদের না বলা সেই কথাগুলো। সন্তানদের মুখে একটুকরো মাংস তুলে দিতে না পারার কষ্ট তারা লুকিয়ে রাখে চোখের কোণে, নিঃশব্দে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন