ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সমাগম ছিল মসজিদ প্রাঙ্গণে। সন্তানদের পরিবার পরিজন নিয়ে মুসলিম ঐতিহ্যের এ নিদর্শন দেখছেন তারা। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দর্শনার্থী স্থান ঘুরে দেখতে পেয়ে খুশি দর্শনার্থীরা।
ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদ প্রাঙ্গনে নানা বয়সী মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপনজনদের সাথে। ঘুরে ঘুরে ষাটগম্বুজের সৌর্ন্দয্য উপভোগ করছেণ তারা। মসজিদ প্রাঙ্গনে অবস্থিত বাগেরহাট যাদুঘরে থাকা খানজাহান (রহ) এর ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শণও ঘুরে দেখছেন তারা। কেউ ছবি তুলছেন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সাড়ে ৬শ’ বছরের পুরোনো স্থাপনার সাথে। শিশুরা খেলা করছে নির্মল পরিবেশে। মসজিদ প্রাঙ্গনে থাকা বিভিন্ন রাইডে চরছে শিশু-কিশোররা। সন্ধ্যা পর্যন্ত মসজিদ কমপ্লেক্সের গেটে টিকিট কাউন্টারে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। বিপুল সংখ্যক এই দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভ্রমন পিপাসুরা।
আরও পড়ুন: রোদ-বৃষ্টি আর উত্তাল সাগরের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা লাখো পর্যটক
নওগাঁ থেকে আসা দর্শনার্থী হাসান দম্পতি বলেন, ‘চাকরির কারণে গেল দুই বছর ঈদে তেমন কোথাও ভ্রমণ যেতে পারিনি। বাবা-মায়ের সাথে এলাকায় ছিলাম, আনন্দ করেছি। আজ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আসলাম, অনেক ভালো লেগেছে।’
ঢাকার রামপুরা এলাকা থেকে পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে ষাটগম্বুজে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ষাটগম্বুজে আসার ইচ্ছে ছিল। এবার ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে চলে আসলাম। এখানে এসে মুসলিমদের যে গৌরবময় ঈতিহাস ছিল সেটা স্বচক্ষে দেখলাম। আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে ষাটগম্বুজ মসজিদের এই সৌন্দর্য দেখে। ঈদের দিনে ষাটগম্বুজের মতো একটি পবিত্র ও বিখ্যাত স্থানে এক সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে আমরা খুব খুশি। আমাদের জেলার এই বিখ্যাত স্থাপনার সৌন্দর্য আমরা সারা পৃথিবীতের ছড়িয়ে দিতে চাই।’
শাহিনা বেগম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ষাটগম্বুজ দেখার পরে বাচ্চারা দোলনাসহ বিভিন্ন রাইডসে উঠেছে। তারা খুবই খুশি হয়েছে এখানে এসে। সময়-সুযোগ পেলে আবারও আসবো।’
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সব সময় টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সচেষ্ট থাকে। বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরাও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলের স্বচ্ছ জলে ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা পর্যটকরা
প্রত্নত্তত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর ষাটগম্বুজ মসজিদে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের দিন নামাজের সময় অন্তত দশ হাজার দর্শনার্থী ষাটগম্বুজে প্রবেশ করেছে। গত ৩ দিনে প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনা ভ্রমণ করেছেন। এসময় ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৭ টাকা সরকার রাজস্ব পেয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রত্নত্তত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্তরা নিয়োজিত রয়েছে।