সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের সাগরতীরে ঢল নেমেছে লাখো পর্যটকের। যারা প্রতিনিয়ত মেতে রয়েছে জেড স্কী, বিচ বাইক, ঘোড়ার পিঠে, কিটকটে বসে ও ক্যামেরায় প্রিয়মুহূর্তগুলো ফ্রেমে বন্দি করতে। একই পর্যটকরা মেতেছেন কেনাকাটায়ও। কিনছেন বার্মিজ পণ্য, শুটকি, শামুক-ঝিনুক, মুক্তার গহনা, আচার সহ নানা পণ্য সামগ্রী। যার কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে সৈকতপাড়ের বার্মিজ পণ্যের দোকানদার, ফটোগ্রাফার, জেড স্কী চালক, বিচ বাইক চালক ও হকারদের।
আর ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রিসোর্টগুলো এখন পর্যটকে কানায় কানায় পূর্ণ। সেখানেও পর্যটকদের সেবায় ব্যস্ততার শেষ নেই কর্তৃপক্ষের। এছাড়া পর্যটকের আগমনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ সরগরম।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের ফটোগ্রাফার নুর হোসেন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। যার কারণে ভালো ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ হাজার আয় করছি পর্যটকদের ছবি তুলে। এখন আমার মতো সৈকতপাড়ের ৭’শ ফটোগ্রাফারের একই অবস্থা।’
কক্সবাজার জেড স্কী সমিতির সভাপতি মনু মিয়া বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৭০টি মতো জেড স্কী রয়েছে। ঈদের ছুটিতে আগত পর্যটকরা জেড স্কীতে চড়ে সমুদ্র উপভোগ করছে। যার কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো। প্রতিদিনই ৩০ হাজার টাকার ওপরে ব্যবসা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি / কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, সৈকতে ভ্রমণপিপাসুদের উচ্ছ্বাসের জোয়ার
বিচ বাইক চালক রাসেল বলেন, ‘পর্যটক আসাতে আমাদের বিচ বাইকের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। পর্যটকরা বিচ বাইকে চড়ছে এবং প্রতি রাইডে ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।’
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্ট; এই পয়েন্টে রয়েছে ছাতা মার্কেট, শামুক-ঝিনুকের মার্কেট, রয়েছে চটপটির দোকানও। সবখানে পর্যটকের সরগরম। ছাতা মার্কেটের দোকানগুলোতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। একই অবস্থা সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্টের। পর্যটকরা সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি করছেন কেনাকাটা। যাতে ৩টি পয়েন্টের দোকানগুলোতে চলছে রমরমা ব্যবসা।
লাবনী পয়েন্টের আনন্দ চটপটির স্বত্বাধিকারী আমান উল্লাহ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে ব্যবসা বেশ ভালো হচ্ছে। প্রতিদিনই ২৫ হাজার টাকার ওপরে চটপটি ফুসকা বিক্রি হচ্ছে। এই পয়েন্টে ৮টি চটপটির দোকান রয়েছে, সবগুলোতে পর্যটক আসছে এবং চটপটি ফুসকা খাচ্ছে। যার কারণে সবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে।’
লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের শাওন বার্মিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পর্যটকের আগমনে ব্যবসা চাঙ্গা। প্রতিদিনই ৮০ থেকে ১ লাখ টাকার বার্মিজ পণ্য বিক্রি করছি পর্যটকদের কাছে। গত ৫ দিনে প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো ব্যবসা হয়েছে।’
মোরশেদ আচার বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. মোরশেদ কামাল বলেন, ‘পর্যটকরা কক্সবাজার ঘুরতে আসলেই আত্মীয়-স্বজনদের জন্য বার্মিজ আচার নিয়ে যান। তার আচার বিক্রির ব্যবসা ভালো হচ্ছে। গত ৫দিনে দেড় লাখ টাকার বার্মিজ আচার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেছি।’
সুগন্ধা পয়েন্টের শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা সালামত উল্লাহ বলেন, অবশ্যই ঈদের ছুটিতে ভালো ব্যবসা হচ্ছে। যেটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিদিনই ৩০ হাজার টাকার ওপরে ব্যবসা হচ্ছে। এ সুগন্ধা পয়েন্টে ৫শ’র ওপরে দোকান রয়েছে, সবাই জমজমাট ব্যবসা করছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে চারদিনেই ৪ লাখ পর্যটক, আরও ৪ লাখের সম্ভাবনা
এদিকে তারকামানের হোটেলগুলো দেখা যায়, পর্যটকে কানায় কানায় পূর্ণ। পর্যটকরা অনেকে ছুটি কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন, আবার অনেকে হোটেলে প্রবেশ করছেন। কিন্তু রুমের জন্য অপেক্ষা করছেন লবিতে।
কক্সবাজার হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আবু তালেব শাহ বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা হচ্ছে ঈদের টানা ছুটিতে। পুরো হোটেল মোটেল রিসোর্ট কিংবা রেস্তোরায় এখন জমজমাট ব্যবসা। আশা করি এরকম ব্যবসা আরো কয়েকদিন থাকবে।’
বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লাখের বেশি পর্যটকের আগমন হয়েছে। যার কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা এখন চাঙ্গা। তবে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে যারা পর্যটকদের হয়রানি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। একই সৈকতে সমুদ্রস্নানে দুর্ঘটনা এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা যাতে নেয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। তারা অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।