ইসলামের দৃষ্টিতে হত্যার ভয়াবহতা

২৩ ঘন্টা আগে
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যার শাব্দিক অর্থ হলো, আত্মসমর্পণ, আনুগত্য ও শান্তি। শব্দটির মূল আরবি ধাতু س-ل-م থেকে উদ্ভূত, যার মর্মার্থ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ ও বিশ্বজগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

ইসলাম ধর্মের মূল লক্ষ্যই হলো মানবজীবনের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার  নিশ্চিত করে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করা। ইসলাম ধর্মে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা শুধু একটি ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং একে গোটা মানবতাকে হত্যা করার শামিল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

 

কোরআন ও হাদিসে হত্যাকে এমন ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার পরিণতি শুধু দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আখিরাতেও চরম শাস্তির কারণ হবে। ইসলাম চায় না কোনো সমাজে রক্তপাত, অবিচার ও নৈরাজ্য বিস্তার করুক; বরং সে চায় শান্তি, ইনসাফ ও মানবিকতায় ভরপুর একটি সমাজ, যেখানে প্রতিটি মানুষের জীবন নিরাপদ ও সম্মানিত।

 

একজন মানুষ হত্যা মানে গোটা মানবজাতিকে হত্যা

 

আল্লাহ বলেন,

 

مَنْ قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا  যে কেউ কাউকে হত্যা করে, সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল। (সুরা মায়েদা:৩২)

 

 

ইসলামের দৃষ্টিতে একটি প্রাণই একটি জগতের সমান। ফলে একজন মানুষকে বিনা কারণে হত্যা করা সমগ্র মানবতাবিরোধী অপরাধ। আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার প্রতিদান জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ, তাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তার জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা নিসা: ৯৩) এই আয়াত অত্যন্ত ভীতিকর। এতে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে মুমিন হত্যা করলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম ও আল্লাহর গজব অবধারিত।

 

আরও পড়ুন: কিসাসই এসব কসাইয়ের সমাধান: আহমাদুল্লাহ

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

قال الله تعالى: من قتل نفسا حراما، فأنا خصمه يوم القيامة আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করে, কিয়ামতের দিন আমি নিজেই তার বিরুদ্ধে বাদী হবো। (সহিহ বুখারি:২৪৭১) কিয়ামতের দিন আল্লাহ নিজেই হত্যাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

 

হত্যা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

اجتنبوا السبع الموبقا . وقتل النفس التي حرّم الله إلا بالحق তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী গোনাহ থেকে বাঁচো. এর মধ্যে একটি হলো,যে প্রাণকে আল্লাহ হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। ( সহিহ বুখারি: ২৭৬৬, সহিহ মুসলিম:৮৯) অন্যায়ভাবে হত্যা এমন এক পাপ, যা ধ্বংসকারী এবং জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে।

 

কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

يجيءُ القاتلُ والمقتولُ يومَ القيامةِ، فيقولُ المقتولُ: يا ربِّ، سلْ هذا: فيمَ قتلني؟ কিয়ামতের দিন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উপস্থিত হবে। নিহত ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব! এ লোকটি আমাকে কেন হত্যা করল তাকে জিজ্ঞাসা করুন?  (সহিহ মুসলিম:২৮৭০) সেই দিন কোনো অজুহাত কাজে আসবে না, হত্যাকারীকে উত্তরদায়ী হতে হবে আল্লাহর আদালতে।

 


ইসলামে হত্যার অনুমতি কখন?

 

ইসলাম কেবলমাত্র তিনটি ক্ষেত্রে শাস্তি বা প্রাণহানির অনুমতি দেয় عن النبي قال: لا يحل دم امرئ مسلم إلا بإحدى ثلاث মুসলমানের রক্ত কেবল তিনটি কারণে হালাল হতে পারে। ১. বিবাহিত অবস্থায় ব্যভিচার, ২. কিসাসের মাধ্যমে হত্যা, ৩. ইসলাম থেকে বের হওয়া (মুরতাদ)। (সহিহ বুখারি:৬৮৭৮, সহিহ মুসলিম:১৬৭৬) ব্যক্তি বা সমাজ নয়, শুধু শরিয়তের বিধান অনুযায়ীই শাস্তি কার্যকর হবে।

 

ইসলামে মানুষের জীবন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। যিনি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করেন, তিনি শুধু একজন মানুষকেই হত্যা করেন না, বরং পুরো মানবতাকে আঘাত করেন। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, কারো প্রাণ নেওয়া নয়, বরং মানুষের জীবন রক্ষা করাই মুমিনের কাজ। তাই মুসলিম সমাজে রক্তপাত ও সহিংসতার পরিবর্তে শান্তি, সহনশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সকলের কর্তব্য।

 

তোমার রাগকে কুরআনের সামনে আনো, 
আর তোমার প্রতিশোধকে হাদিসের সামনে থামাও।
মনে রেখো, একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যার অর্থ 
আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন