ইসলাইলি পণ্য বয়কটের কোনো প্রভাব আছে কি?

১ সপ্তাহে আগে
আমরা আজ এমন সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছি, যখন সারা বিশ্বের অমুসলিম শক্তি মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে লিপ্ত। পৃথিবীর চারদিকে মুসলিমরা আজ নির্যাতিত-নিপীড়িত। মনুষ্যত্বের বুলি আওড়ানো পশুদের হিংস্র থাবায় মুসলিমদের প্রতিটি ভূখণ্ড আজ রক্তাক্ত। মজলুমের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস।

বিশেষভাবে আল-আকসা ও ফিলিস্তিনের প্রতি ইঞ্চি মাটি আজ অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত। নির্দোষ-নিরীহ নারী ও শিশুর রক্তে সিঞ্চিত হচ্ছে প্রতিটি বালু-কণা। বোমা মেরে গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিস্তৃত এলাকা। চলমান এ সংকটে মজলুম মুসলিম ভাইদের সমর্থনে আমাদের একটি বড় করণীয় হলো ইয়াহুদি ও তাদের মিত্রদের পণ্য সম্পূর্ণরূপে বয়কট করা এবং তাদের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করা।

 

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 

 

তোমরা সৎকর্মে ও পরহেজগারিতে পরস্পরকে সাহায্য কর, পাপকাজে ও জুলুমে একে অন্যকে সাহায্য করো না।' (সুরা মায়িদা ২) আরও ইরশাদ হয়েছে, '(হে নবি), আপনি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে এমন পাবেন না যে, তারা  ওই সব লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করে, যারা আল্লাহ ও তার রসুলের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত, হোক না ওরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা জাতি-গোষ্ঠী। এমন লোকদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং নিজের 'রুহ' দ্বারা তাদের সাহায্য করেছেন। (সুরা মুজাদালাহ ২২)

 

সুতরাং, ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে সর্বাত্মক লড়াইয়ে লিপ্ত ইয়াহুদি ও কুফফারগোষ্ঠীর সকল পণ্য বয়কট করে তাদের সাথে বিদ্যমান সম্পর্কের ইতি টানা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। যেন আপনার টাকায় কেনা গুলিতে ফিলিস্তিনের শিশুদের বুক আর ঝাঁঝরা না হয়। আপনার কেনা পণ্যের টাকা যেন দানব হয়ে ফিলিস্তিনিদের লণ্ডভণ্ড না করে।

 

উল্লেখ্য, বয়কট হতে হবে স্থায়ী। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বয়কটের জোয়ার শুরুতে উল্লেখযোগ্য থাকলেও বেশি সময় স্থায়ী হয় না। ফলে শত্রুপক্ষের ওপর বয়কটের আর তেমন প্রভাব পড়ে না, বরং দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আজই কুফফারদের পণ্য স্থায়ীভাবে বয়কটের শপথ গ্রহণ করুন।

 

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’র খবর

 

বয়কটের কয়েকটি প্রভাব

 

শত্রুর ওপর অবরোধ ও বয়কট আরোপের ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব অনস্বীকার্য। বিভিন্ন ধরণের জরিপের মাধ্যমে এ বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। বেশি দূরে না গিয়ে তুফানুল আকসা শুরু হওয়ার পরবর্তী বয়কটের কয়েকটি প্রভাব উল্লেখ করছি—

 

১. ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের নজিরবিহীন হামলা শুরুর পর প্রতিবাদে বয়কটের মুখে পড়ে অল্প কিছু দিনেই 'স্টারবাকস' (Starbucks)-এর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। (Here's why Starbucks faces over $11 billion loss in value; The Economic Times : 07 Dec 2023)

 

২. ইসরাইলের ফুটবলদলের সাথে চুক্তি থাকার কারণে বয়কটের মুখে পড়ে 'পুমা' (PUMA)। তারপর কয়েক দিনের বয়কটে তারা চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়। (Puma to end sponsorship of Israel's national football team next year; Reuters : December 12, 2023)

 

৩. ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে স্প্যানিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড 'জারা' (ZARA)। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের পরপরই ব্র্যান্ডটি বয়কটের ডাক ওঠে। পরে তুমুল প্রতিবাদের মুখে নিজেদের ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় 'জারা'। (Zara pulls controversial ad from website after Gaza boycott calls; Aljazeera : 11 Dec 2023)

 

৪. ইসরাইলি সেনাদের মাঝে বিনামূল্যে খাবার বিতরণের অভিযোগে বয়কটের ডাক ওঠে 'ম্যাকডোনাল্ডস' (McDonald's)-এর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ব্যবসা বাঁচাতে তারা ইসরাইলি কোম্পানি থেকে ২২৫টি রেঁস্তোরা কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। (McDonald’s buys all 225 of Israeli franchise restaurants after boycotts; Aljazeera : 05 April 2024)

 

এছাড়াও মুসলিম নিধনে বিশ্বের মোড়ল সেজে বসা পশ্চিমাদের বেপরোয়া সমর্থন পরিহারে বাধ্য করতে বয়কট অত্যন্ত প্রভাবশীল। পাশাপাশি দেশীয় পণ্য ব্যবহারে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয় এবং ঘুড়ে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। শত্রুদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকির ভয়ভীতি অন্তর থেকে দূর হয়ে নিজেদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস জন্মায়। 

 

উপরন্তু একজন মুসলিম হিসেবে কুফফার গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার বড় একটি অস্ত্র হলো 'বয়কট'। মনে রাখবেন, 'ইসরাইলি পণ্য নয়' এমন কথা পরিহার করতে হবে। শুধু ইসরাইল নয়, বয়কট হবে তার সাঙ্গপাঙ্গরাও। তাই আসুন, সবাই হাতে হাত রেখে নিজ মুসলিম ভাইদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে আরেকবার ঘুরে দাঁড়াই এবং আওয়াজ তুলি— 'বয়কট ইসরাইল, বয়কট ইয়াহুদিবাদ'।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন