ইসরায়েলি-হেজেবুল্লাহ সংঘাতের কুটনৈতিক নিস্পত্তির উপর জোর দিলেন ব্লিংকেন

৪ সপ্তাহ আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন শুক্রবার বলেন যে ইসরায়েল এবং লেবাননের হেজবুল্লাহ জঙ্গিদের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। লন্ডনে জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী  আয়মান সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের সময়ে ব্লিংকেন এই মন্তব্য করেন। এ সপ্তাহে আরও আগের দিকে শান্তির অন্বষোয় মধ্যপ্রাচ্য সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কূটনীতিক লন্ডনে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আগে সংবাদদাতাদের ব্লিংকেন বলেন তিনি এবং সাফাদি গাজা ও লেবাননের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ওই একই সংবাদ সম্মেলনে সাফাদি গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিগোষ্ঠীগত শুদ্ধি অভিযান চালানোর জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেন এবং বলেন এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ব্লিংকেন বলেন তিনি লন্ডনে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন । তারা এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন যে লেবাননের লড়াইয়ের কূটনৈতিক নিস্পত্তি অত্যন্ত জরুরি যার  মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের পূর্ণ বাস্তবায়ন। অন্যান্য বিষয় ছাড়াও ২০০৬ সালের চুক্তিতে লিতানি নদী ও ইসরায়েল- লেবানন সীমান্তের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল তৈরি করেছিল। ঐ চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলি বাহিনীকে লেবাননের বাইরে রাখা এবং হেজবুল্লাহর দীর্ঘমেয়াদি নিরস্ত্রীকরণ। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে উভয় পক্ষই এই প্রস্তাব লংঘন করেছে।   এক বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন এই সংঘাতের যে কোন কুটনৈতিক সমাধানে সীমান্তের উভয় দিকের বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে। ইসরায়েল এক মাস আগে লেবাননের বিরুদ্ধে এই বলে বড় রকমের আক্রমণ চালায় যে সীমান্তের অপর দিক থেকে রকেট আক্রমণে উত্তর থেকে হাজার হাজার বাস্তুচ্যূত ইসরায়েলির নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে তারা ইরান-সমর্থিত হেজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। হেজবুল্লাহ বলে তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আক্রমণ চালায়। বৃহস্পতিবার দোহায় ব্লিংকেন ঘোষণা করেন যে গাজা ভূখন্ডে সংঘাত বন্ধের জন্য অস্ত্র বিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আগামি দিনগুলিতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক সহযোগীরা বৈঠক করবে। শুক্রবার, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে এই অবধি লেবাননে ইসরায়েল আক্রমণ চালিয়ে ৫৫ টি হাসপাতালের উপরে আঘাত হেনেছে। আবিয়াদ বলেন এই সব আক্রমণে ১৬৩ জন নিহত এবং ২৭২ জন আহত হন।    লেবানন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক জেনিন হেনিস-প্লাসচ্যার্ট  বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য  সংস্থা এটা নিশ্চিত  করেছে যে ৫৩ টি স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে যার ফলে ৯৯ জন নিহত এবং ৮২ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মীরাও রয়েছেন। বোমা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গোটা লেবানন জুড়ে আটটি হাসপাতাল সম্পূর্ণ খালি করা হয়েছে এবং আরও সাতটি আংশিক খালি করা হয়েছে। তারা আরও বলছে যে ২৭ টি অ্যাম্বুলেন্সের উপরও আঘাত হানা হয়। দূর্গত এলাকার প্রায় অর্ধেক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং লেবাননের সংবাদ মাধ্যম জানায় লেবাননের দক্ষিণঞ্চলের হাসবায় শহরে ইসরায়েলের বিমান হামলা কয়েকটি অতিথিশালায় আঘাত হানে যেখানে সাংবাদিকরা বাস করছিলেন। এই আক্রমণে ঘুমন্ত অবস্থায়  কমপক্ষে তিন জন সাংবাদিক প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে আহত হন।   ইরানপন্থি সংবাদ মাধ্যম আল মায়াদিন এবং হেজবুল্লাহর সম্প্রচার কেন্দ্র আল মানার তাদের জারি করা বিবৃতিগুলিতে এটা নিশ্চিত করেছে যে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা তাদের কর্মী। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের সন্ত্রাসী আক্রমণে জঙ্গিরা প্রায় ১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাস এখনও প্রায় ১০০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে , মনে করা হচ্ছে এদের এক-তৃতয়াংশই মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে ৪২,৮৪৭ ‘এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন তবে ইসরায়েল বলছে যে নিহতদের এই সংখ্যার মধ্যে কয়েক হাজার হামাস জঙ্গিও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্যরা হেজবুল্লাহ এবং হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে। এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন ভিওএ’র জাতিসংঘের সংবাদদাতা মার্গারেট বশির। এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য পাওয়া গেছে এপি, এএফপিও রয়টার্স থেকে।
সম্পূর্ণ পড়ুন