ইসরাইলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

২ সপ্তাহ আগে
গাজায় সামরিক আগ্রাসনকালে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রতিবেদন করায় অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে নিযুক্ত জাতিসংঘের স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার (৯ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন। তিনি আলবানিজকে ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রচারণা‘ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

 

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলবানিজ। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানে বিশ্বব্যাপী এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর তিনি। 

 

এ কারণে ইসরাইল ও তার মিত্র দেশগুলো বছরের পর বছর ধরে আলবানিজকে তিরস্কার করে আসছে এবং তাকে জাতিসংঘের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছে।

 

সম্প্রতি তিনি গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা নিয়ে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ফিলিস্তিনি জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা ও গাজায় চলমান গণহত্যায় ইসরাইলকে সহায়তা করছে।

 

আরও পড়ুন: ইসরাইলের একগুঁয়েমির কারণে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা: হামাস

 

গত বুধবার এক বিবৃতিতে আলবানিজ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নিয়ে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইউরোপের দেশগুলো তাকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।

 

এক্স-এ এক পোস্টে আলবানিজ লিখেছেন, ‘ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিসের নাগরিকদের এটা জানা উচিত, আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে নেয়া প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ তাদের সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলে ও দুর্বল করে দেয়।’

 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, আইসিসিতে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আলবানিজের প্রচেষ্টাই তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আইনি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইসরাইল প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে মার্কিন প্রশাসনের হুমকি-ধমকি ও হয়রানি নতুন নয়।

 

গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে ইসরাইলি নেতাদের লক্ষ্য করে কাজ করা আইসিসি কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান রাখা হয়। গত মাসেই ট্রাম্প প্রশাসন আইসিসির চারজন বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

 

আরও পড়ুন: লেবাননে এবার ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করল ইসরাইল

 

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হামাস ১০ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে। গোষ্ঠীটি আরও জানিয়েছে, ইসরাইলের একগুঁয়েমির কারণে যুদ্ধবিরতির জন্য চলমান আলোচনায় ‘অচলাবস্থা’ তৈরি হয়েছে।

 

গাজা যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতারের দোহায় গত তিন দিন ধরে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। তবে বুধবার (৯ জুলাই) এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনায় একপ্রকার অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বিবিসি বলছে, ইসরাইল-হামাস নিজেদের দেয়া শর্তে অনড় থাকায় চুক্তিতে পৌছানো যাচ্ছে না।

 

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আশা প্রকাশ করে বলেছেন, শিগগিরই একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। হোয়াইট হাউসে বুধবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকের পর তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধবিরতির ‘খুব ভাল সুযোগ’ রয়েছে।

 

যদিও তার সাম্প্রতিক মন্তব্যে যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা কম বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্পের কথায়, ‘আমি মনে করি, চলতি সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে আমাদের একটা সুযোগ আছে। তবে নিশ্চিত না। তবে খুব ভালো সম্ভাবনা আছে যে আমরা চলতি সপ্তাহে এবং যদি না হয় তবে আগামী সপ্তাহেই কোনো না কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব।’ 

 

আরও পড়ুন: ট্রাম্প-নেতানিয়াহু ‘আল্লাহর শত্রু’, ১০০ মুসলিম পণ্ডিতের ফতোয়া

 

এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন চলছেই। বুধবারও উপত্যকার মধ্যাঞ্চল কেঁপে ওঠে ইসরাইলি বিমান হামলায়। খান ইউনিস, আল শাতি শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন জায়াগায় এদিন হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী।

 

গাজায় দখলদার বাহিনীর আগ্রাসনে আরও ১০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শতাধিক। বিপরীতে হামাসের পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছে পাঁচ ইসরাইলি সেনা। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘণ করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন