ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী সফলভাবে ইসরাইলের দুটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ড্রোন (মাইক্রো এয়ার ভেহিকল) ভূপাতিত করেছে।
পাইলটদের ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামি রেভ্যলুশনারি গার্ড পরিচালিত সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এক নারী পাইলটকে আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইরানের হামলায় ইসরাইলে বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত, অনেক হতাহত
ইরানের দাবি সত্য হলে এটাই হবে অভিযানে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ বিমান ধ্বংস হওয়ার প্রথম ঘটনা। এর আগে দুর্ঘটনায় পঞ্চম প্রজন্মের অত্যাধুনিক এই বিমান ধ্বংস হলেও শত্রুর হাতে ভূপাতিতের কোনো রেকর্ড নাই।
তবে, ইরানের দাবির সত্যতা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র এই খবরটি অস্বীকার করেছেন এবং পাইলট আটক হওয়ার খবরকে "ভিত্তিহীন" বলেছেন।
এর আগে শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছিলো ইরানে হামলার পর তাদের সকল পাইলট এবং বিমান অক্ষত অবস্থায় ফেরত এসেছে।
এফ-৩৫ ফাইটার জেট:
এফ-৩৫ যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ মাল্টি-রোল ফাইটার জেট। অত্যাধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তির কারণে এটি শত্রুর রাডারের নজর এড়াতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়। এই বিমান যুক্তরাষ্ট্রের বহরে থাকা সবচেয়ে আধুনিক বিমানগুলোর একটি। অল্প কিছু মিত্র দেশকে এই বিমান সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হামলা-পাল্টা হামলা
শুক্রবার স্থানীয় ভোররাতে অপারেশন রাইজিং লায়ন নামে আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। ইরানে এখন পর্যন্ত এটিকে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়েই ইসরাইলের প্রায় ২০০ যুদ্ধবিমান অভিযানে যোগ দেয় এবং ইরানের ১০০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালায়। এদের মধ্যে ছিল পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক মিসাইল স্থাপনাগুলো, সামরিক ঘাঁটি ও আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম। পরবর্তীতে শুক্রবার বিভিন্ন সময় নতুন করে আরও বেশ কিছু হামলা চালায় ইসরাইল।
এসব হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান, রেভ্যলুশনারি গার্ডের প্রধানসহ অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এছাড়া অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জবাবে ইসরাইলে পাল্টা হামলা চালালিয়েছে ইরান। ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব এবং অধিকৃত জেরুজালেমে ইরানের বেশ কয়েকটি মিসাইল আঘাত হাতে। এতে প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় রাত ২টার দিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ইসরাইলের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৪০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইরান এই পাল্টা আক্রমণের নাম দিয়েছে 'অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩'। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড (বিপ্লবী গার্ড বাহিনী) জানিয়েছে, তারা "ডজনখানেক লক্ষ্যবস্তু, সামরিক স্থাপনা এবং বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইরানের হামলায় ইসরাইলে বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত, অনেক হতাহত
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান। এর পরপরই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেতে থাকে। তেল আবিব ও জেরুজালেমের রাতের আকাশ বিশাল অগ্নিগোলায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হামলা হয়েছে। এছাড়াও, অন্যান্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে থাকা ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তারপর খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
আক্রমণ শুরুর পর ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরাইলের ডজনখানেক লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে সামরিক ঘাঁটি ও বিমানঘাঁটিও রয়েছে।
রাত ১২টার দিকে দেওয়া দ্বিতীয় বিবৃতিতে আইআরজিসি জানায়, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইউনিটগুলো সেইসব ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যেগুলো থেকে ইরানের উপর হামলা শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অবস্থিত অস্ত্র উৎপাদনকারী শিল্পস্থলসহ অন্যান্য সামরিক স্থাপনাও লক্ষ্যবস্তুতে ছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, জেরুজালেম ও তেল আবিবের আকাশে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখা গেছে। ওই সময় ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি হামলায় ইরানের যেসব শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন
তেল আবিবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছবিও প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল “যুদ্ধ শুরু করেছে” এবং তার জবাবে ইরান “ভয়াবহ আঘাত হানবে”।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের লড়াই ইরানি জনগণের সঙ্গে নয় বরং তাদের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন: “সামনে আরও কিছু আসছে। এই শাসকগোষ্ঠী জানে না কী তাদের উপর নেমে এসেছে বা কী আসছে। তারা কখনও এতটা দুর্বল ছিল না।”