বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় হিন্দু আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী ইসকনের ৫৪ ভক্তকে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ফেরত পাঠায়।
শনিবার ও রবিবার সকালে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইসকন ভক্তরা ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে বেনাপোলে আসেন।
ইসকন সদস্য সৌরভ তপন্দার চেলী বলেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে যাওয়ার জন্য বেনাপোলে এসেছিলেন তারা। ভারতে যাওয়ার অনুমতি নেই বলে কোনো কারণ ছাড়াই ইমিগ্রেশন থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ইসকন ভক্তদের ভারত ভ্রমণ সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। তাই ৫৪ জন ভক্তকে ভারতে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেফতার
এই ঘটনা ঘটলো বাংলাদেশে সনাতনী জনগোষ্ঠীর একটি সংগঠনের সাম্প্রতিক প্রতিবাদ কর্মসূচির পটভূমিতে, যার নেতৃত্বে ছিলেন ইসকনেরর প্রাক্তন সদস্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাস।
গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ১৯ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়, যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম এবং রংপুরে সমাবেশ করা হয়।
গত ২৫ নভেম্বর পুলিশ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে তার অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষের সময় সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলামকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন কুপিয়ে হত্যা করে। আহত আরও ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বুধবার হাইকোর্টে তুলে ধরা হয়।
ইসকনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয় ২৭ নভেম্বর।
গণমাধ্যমের রিপোর্ট তুলে ধরে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ বিষয়ে আদেশ প্রার্থনা কর হয়। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যার্টনি জেনারেলকে ডেকে পাঠায় আদালত। পরে ইসকন ও সাম্প্রতিক ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপ জানাতে বলে হাইকোর্ট।
কূটনৈতিক টানা-পোড়েন
ভারত বাংলাদেশের হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবান জানায়।
তবে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয় যে, দিল্লির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
“বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয় সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুদের সমানভাবে দেখে, এবং দেশে মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি চিরকালের জন্য শেষ করতে সংকল্পবদ্ধ,” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, দেশের বিচার বিভাগ “সম্পূর্ণ স্বাধীন “ এবং সরকার বিচার বিভাগের কাজে “হস্তক্ষেপ করে না।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিষয় বর্তমানে আদালতের হাতে রয়েছে।
ব্লিংকেন-ইউনূস বৈঠক
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত ছাড়াও, আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ২৬ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের এক বিরতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
ঐ সাক্ষাৎ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, দুই নেতা বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যসহ বাংলাদেশের সকলের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
এর পর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম এক্স ও ট্রুথ সোশ্যাল-এ অক্টোবর ৩১-এ এক পোস্টে লেখেন, "আমি হিন্দু,খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই যারা বাংলাদেশে মব দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হচ্ছে, দেশটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।"
ট্রাম্প ৫ নভেম্বর নির্বাচনে জয়ী হন এবং তিনি ২০ জানুয়ারি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন