মৎস্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে এরইমধ্যে হাওড়ের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। চলছে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রস্তুতি।
নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার হাওড়াঞ্চলে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি (২৯ মে) থেকে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি (৩০ জুন) পর্যন্ত সময়কে মাছের প্রধান প্রজননকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে মৎস্য অধিদফতর। এই সময়টিতে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তাই এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলে রেণু (শিশু মাছ) ছড়িয়ে পড়তে পারবে প্লাবনভূমিতে।
জেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবাশীষ সরকার জানান, জেলায় ১৩টি অভয়াশ্রম, ১২টি নদী, ৫১০টি বিল এবং ৬৭৮টি প্লাবনভূমি রয়েছে। হাওড়ে বছরে ২৫ হাজার ৭৬৬ মেট্রিক টন এবং প্লাবনভূমিতে ৩০ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারলে মাছের উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছাতে পারে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি স্থানীয় জেলেরা ও সচেতন মহল। তবে তারা খাদ্যের নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছে।
জেলে মো. আলাদিন মিয়া বলেন, ‘আমাদের পেশা মাছ ধরা। যদি খাদ্যের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, তাহলে আমরা দুই-তিন মাস মাছ না ধরতেও রাজি।’
আরও পড়ুন: সুন্দরবন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, দুশ্চিন্তায় পর্যটকবাহী নৌযান-জেলে পরিবার
স্থানীয় জেলে সোহাগ মিয়া বলেন, ‘কারেন্ট জাল বন্ধ করতে পারলে রেণুগুলো সহজে বড় হয়ে ছড়িয়ে পড়বে হাওড়ে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়বে, জেলেরা টিকবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাফিকুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় কলকারখানা নেই বললেই চলে। ধান ও মাছই এখানকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। প্রয়োজনে মাছ প্রক্রিয়াজাত করে রফতানিও করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইলিশ মাছের মতো এখানেও মা মাছ রক্ষায় সফল উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে হাওড়াঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। এই খাতকে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে নতুন সম্ভাবনার শিল্প।’
সরকার ও প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আশাবাদী হাওড়বাসী। সময়মতো বাস্তবায়ন ও জেলেদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে এ পদক্ষেপ হতে পারে হাওড়াঞ্চলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট।
প্রসঙ্গত, নেত্রকোনা জেলায় মোট ৫৪ হাজার ৬৯৫ জন মৎস্যজীবীর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৭ হাজার ১৩৫ জন। তাদের জন্য এরইমধ্যে জেলে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং প্রণোদনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।