আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, শনিবার (১৪ জুন) ইরানজুড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালায় ইসরাইল। এ হামলায় তেহরানের শাহরান তেল স্থাপনায় আগুন লাগে। জবাবে রাতে ইসরাইলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই শনিবার রাতে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের হুতিরা। এটা গত এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা। তবে এসব হামলা কোথায় কিভাবে করা হয়েছে তা আল জাজিরার বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ জুন) তারা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। ওইদিন এক ঘোষণায় গোষ্ঠীটি জানায়, তারা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর জবাবে ইসরাইল হুতিদের দখলে থাকা ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরে বিমান হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের নিচে আটকা ৩৫ জন
ইসরাইলবিরোধী অবস্থানকে আরও জোরালো করে হুতির শীর্ষ নেতা আবদুল মালিক আল-হুতি বলেছেন, ইসরাইলকে প্রতিহত করা ও তার আগ্রাসন ঠেকানো শুধু একটি দেশের দায়িত্ব নয়, বরং পুরো অঞ্চলের স্বার্থেই তা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, শত্রুকে প্রতিহত করা এবং তার দমন-পীড়ন ও লঙ্ঘনের অপমার্জন বন্ধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা পুরো অঞ্চলের দেশগুলোর জন্যই উপকারী।
গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত প্রায় দেড় বছর ধরে তারা নিয়মিতভাবে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। তবে গত মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর হুতিরা হামলা চালানো বন্ধ করে। কিন্তু ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করলে তারা আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে।
আল জাজিরা জানায়, শনিবার ইরানি হামলার জেরে পুরো ইসরাইলে সাইরেন বেজে উঠে। জেরুজালেম ও হাইফা শহরের আকাশেও ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যায়। বাসিন্দাদের সুরক্ষিত স্থানে যেতে বলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
আরও পড়ুন: ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭ জন নিহত
গণমাধ্যমের রিপোর্ট মতে, তেল আবিব ও এর আশপাশের এলাকাকে লক্ষ্য করে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এর মধ্যে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যার বেশিরভাগই ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব লক্ষ্য করে সর্বশেষ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাতজন ইসরাইলি সেটেলার (অবৈধ বসতি স্থাপনকারী) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
এর মধ্যে ৭৪ জন আহত হয়েছেন বাত ইয়াম এলাকায়, যার মধ্যে তিনজন গুরুতর, পাঁচজন মাঝারি এবং ৬৬ জন হালকা। রেহোবত এলাকায় ২৮ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুইজন গুরুতর, সাতজন মাঝারি এবং ১৯ জন হালকা।
ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার দৃশ্য ওই ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরে পড়েছে।
ইসরাইলি মিডিয়া আরও জানিয়েছে, ইনস্টিটিউটের এমন একটি ভবনে আগুন লেগেছে যেখানে বেশ কয়েকটি গবেষণাগার রয়েছে। আগুনের ফলে ভবনের ভেতরে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে।
আরও পড়ুন: ‘তেহরান জ্বলছে’ আবার ‘তেল আবিবও জ্বলছে’
ইসরাইলি গণমাধ্যম আরও জানায়, ইরানের হামলার পর বাত ইয়াম এলাকাটি আর চেনা যাচ্ছে না। এই এলাকায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে কমপক্ষে ৩৫ জন আটকে আছে। যাদের বেশিরভাগই মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরমাণু ইস্যুতে ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনার মধ্যে বিনা উসকানিতে গত শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। সেই হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। যার পাল্টা জবাব দিচ্ছে ইরানি সামরিক বাহিনী।
ইসরাইলের হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত দুই দিনে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জনই শিশু।
]]>