আরব নেতারা ইসরাইলি হামলাকে ‘জঘন্য আক্রমণ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা করেছেন। কিন্তু সমালোচনার এই কোলাহলের মধ্যেও, অঞ্চলটির এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় উল্লেখযোগ্যভাবে নীরব রয়েছে, সেটি হলো সিরিয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে সিরিয়ার নতুন সরকারের নীরব থাকার সিদ্ধান্তটি ইঙ্গিত দেয় যে গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহীরা আসাদ সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে দেশটির ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা পরিবর্তিত হয়েছে।
এই অঞ্চলে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম ছিল সিরিয়া এবং সেখানে ‘ইসরাইল-বিরোধী মিলিশিয়া’, তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষ, এর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সময় গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়েছিল তেহরান।
আরও পড়ুন: দাবি ইরানের /মোসাদের অপারেশন পরিকল্পনা কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা!
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকে, নতুন সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সিরিয়ায় ইরানের অনুগতদের আর স্বাগত জানানো হবে না এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা সিরিয়ার মাটি থেকে কোনো ‘সশস্ত্র গোষ্ঠীকে’ ইসরাইলে আক্রমণ চালানোর অনুমতি দেবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রতিশ্রুতি পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন অর্জনের জন্য আল-শারার প্রচেষ্টার অংশ এবং ইরানের প্রতি গভীর ক্ষোভের ফল যে, ইরান সিরিয়ার প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় বিদ্রোহী বাহিনীকে লড়াই করার জন্য স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে সামরিক সহায়তা দিয়েছিল।

এখন, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের সুযোগ করে দিয়েছে - এবং ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আল-শারা যে পশ্চিমা সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছেন, তা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ইব্রাহিম আল-আসিল বলেন,
সিরিয়ার নীরবতা ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি শক্তিশালী সংকেত যে সিরিয়া আর এই অক্ষের অংশ নয় এবং সিরিয়ার মাটি কোনো আঞ্চলিক শক্তি ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য ব্যবহার করবে না।
‘সিরিয়ার নতুন সরকার এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং এখন তারা তা করে দেখাচ্ছে,’ যোগ করেন আসিল।
আরও পড়ুন: সিরিয়ার আকাশসীমা রোববার সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
এ বিষয়ে অবগত দুই কর্মকর্তার মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আল-শারার সরকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় জড়িত হয়েছে — যা মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক দশক ধরে সংঘাতের বিপরীত দিকে থাকা দুটি দেশের জন্য এটি এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে রেখেছে ইসরাইল। আসাদ সরকারকে উৎখাতের পর, তারা এই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে এবং সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটি এবং অস্ত্রের গুদামে শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে। কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ইসরাইলের জন্য হুমকিস্বরূপ ‘চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলির’ নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
কিন্তু গত এক মাস ধরে সিরিয়ায় ইসরাইলি বোমা হামলার গতি কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার নতুন নেতাদের ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও আল-শারা বলেননি যে তিনি এটি করার কথা বিবেচনা করবেন।
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশা করছেন, সিরিয়া সরকার ইসরাইল-ইরান চলমান সংঘাতের ফলে ‘আরও দুর্বল তেহরানকে স্বাগত জানাবে’।
আর তেমনটি হলে এ ঘটনা সিরিয়াকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চাপ দিতে ইসরাইলকে আরও বেশি সুবিধা দেবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: রয়টার্সকে তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী /সিরিয়ায় থাকা তুর্কি সেনারা এখনই ফিরছে না
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেন,
আমি মনে করি, আল-শারা সরকার এমন একটি সম্ভাব্য ফলাফল ছাড়া আর কিছুই চাইবে না যেখানে ইরান দুর্বল হয়ে পড়বে, নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারবে না।
কিন্তু এর ফলে ইসরাইল আল-শারাকে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দিতে পারে এবং সিরিয়ার ভূখণ্ডে ‘নিরাপত্তা হুমকির’ সম্মুখীন হলে ইসরাইল সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার পেতে পারে বলেও জানান ওয়াকিল।
এছাড়াও ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত সিরিয়ানদের মধ্যে এই আশঙ্কাও জাগিয়ে তুলেছে যে তাদের দেশ ইরান ও ইসরাইলের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস