ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা: হরমুজ প্রণালি ঘিরে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন শঙ্কা!

৩ সপ্তাহ আগে
বিশ্বের জ্বালানি পরিবহনের ২০ ভাগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে এর প্রভাব দক্ষিণ এশিয়াসহ কমবেশি পুরো বিশ্বেই পড়বে। বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতা ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জেরে বাড়বে জীবনযাপন ব্যয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য পথ পুরোপুরি বন্ধের সক্ষমতা ইরানের আছে কিনা সেই প্রশ্নও সামনে নিয়ে আসছেন বিশ্লেষকরা।

ইসরাইল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলায় নাটকীয়ভাবে বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা। যার কেন্দ্রবিদুতে বৈশ্বিক তেল-বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালি। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়।

 

তবে চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি রফতানির পথ কী বন্ধ করে দিবে ইরান? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাণিজ্য ও সমরবিশারদদের মনে।

 

আরও পড়ুন: হরমুজ প্রণালী কি বন্ধ করবে ইরান, কী প্রভাব পড়বে?

 

এই প্রণালি যেন ইরানের হাতে থাকা অদৃশ্য বোমার মতো। এমন শঙ্কার মুখে প্রথম ধাক্কায় শুক্রবার (১৪ জুন) বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ১৩ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। সোমবার (১৬ জুন) প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় ৭৫ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে যদি জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া ইরান থেকে তেলের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) বলছে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত জ্বালানি তেলের প্রায় ৭০ শতাংশেরই ভোক্তা দক্ষিণ এশিয়া। যার মধ্যে আছে বাংলাদেশও। প্রভাব ফেলবে ইউরোপের গ্যাসের বাজারেও। কেন না, কাতার হচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম এলএনজি রফতানিকারক, যা বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশ। এই গ্যাস রফতানি করা হয় হরমুজ প্রণালি দিয়েই। জ্বালানি ব্যয় বাড়লে ব্যাহত হবে ইউরোপের শিল্পকারখানার উৎপাদন, পরিবহন ও কৃষিখাত।

 

এই পথে পণ্য রফতানি বিঘ্ন হলে বিভিন্ন দেশের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি দেরি হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে সরবরাহ ব্যবস্থায়। বাড়বে জাহাজ চলাচলের বিমা ব্যয়, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ের খরচ।

 

আরও পড়ুন: ইরান-ইসরাইল সংঘাত: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছেই

 

তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার মানে হচ্ছে পুরো দুনিয়াজুড়ে বাড়বে খাবার ও পরিবহন ব্যয়। এর প্রভাবে বাড়বে মূল্যস্ফীতি তথা জীবনযাত্রার ব্যয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সুদহার বাড়িয়ে দিতে পারে ফেডারেল রিজার্ভসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি টালমাটাল অবস্থা হবে বিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজারেও।

 

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনায় শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাবে সোমবার প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে মার্কিন ডলার। এতে দেশগুলোর পণ্য আমদানি খরচ বেড়ে যেতে পারে। এদিকে, উত্তপ্ত স্বর্ণের বাজার। স্পট মার্কেটে দাম সাড়ে ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গোল্ডম্যান শ্যাক্স পূর্বাভাস বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ কিনতে থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে দাম উঠতে পারে ৪ হাজার ডলারে।

 

হরমুজ প্রণালি না পেরিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে সমুদ্রপথে কিছুই রফতানি করা সম্ভব নয়, এটিই ইরানের হাতে বড় অস্ত্র। কিন্তু বাস্তবে এই পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা ইরানের নেই বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন