ইউটিউবে দেখা ভিনদেশি দুর্লভ ফুলটি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। আগামীতে দেশের বিভিন্ন জেলায় লিলিয়াম ফুল চাষে আগ্রহী কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, শীত প্রধান দেশগুলোতে সাদা, হলুদ, কমলা, গোলাপি, লাল ও বেগুনি বর্ণের লিলিয়াম ফুল দেখা যায়। ফুলের বর্ণচ্ছটা অনেকটা চিত্রের মতো। দেখলে মনে হয় কোনো শিল্পী তার তুলি দিয়ে ফুলের গায়ে অতিশয় নিপুণ কাজ করেছে। এ জাতের ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে; যা বেশ প্রসারিত হয়। এবার ১৬ ডিসেম্বর, নববর্ষ ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে সুগন্ধি ‘লিলিয়াম’ ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন ফুলচাষিরা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদের জমিতে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। বিদেশি (নেদারল্যান্ড) জাতের লিলিয়াম ফুলের এই মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে মধুমতি নার্সারির মালিক টিপু সুলতানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন: লাল তীর সিডস লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার আউয়াল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালাসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন: বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গদখালীর ফুলচাষিরা
সফল উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাল তীর লিমিটেডের সহযোগিতায় নেদারল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা ২০০টি গাছ দিয়ে উপজেলার গড়ফা গ্রামের নিজ জমিতে গত ৩০ অক্টোবর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। মাত্র ৩৪ দিনে হারভেস্টে চলে আসে। এতে আমরা খুশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক ফুলের চাষ আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত হবে। এটা খুব দামি ফুল। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। এতে আমরা খুব লাভবান হবো মনে করছি। এরইমধ্যে অনেক কৃষক আসছেন চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। প্রতিদিন ফুলবাগান দেখতে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। অনেকে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। প্রথমবারের মত এই ফুল দেখে অনেকে উচ্ছ্বসিত।’
লাবনী নামের এক তরুণী বলেন, ‘ফুলটি আমরা ইউটিউবে দেখেছি, আজ নিজ চোখে দেখলাম, ছবি তুললাম। উচ্চমূল্যের ফুল দেখে অনেক ভালো লাগলো। আমরা চাই এই ফুলের চাষ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে একদিনেই ১৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি
লাল তীর সিডস লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার আউয়াল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষকদের সবজীসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে এগিয়ে নিতে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি লেদারল্যান্ড থেকে লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) এনে চাষিদের দেয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে ভালো উৎপাদন হওয়ায় বিদেশি জাতের লিলিয়াম ফুলের সম্ভাবনা দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, আশা করি, এই ফুলের উৎপাদন বাড়লে আগামীতে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। তাই কৃষকদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শংকর মজুমদার বলেন, ‘লিলিয়াম ফুলের বর্ণ বৈচিত্র ও সুগন্ধের কারণে বাংলাদেশেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমদানি করা প্রতিটি ফুল আমাদের দেশে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাগেরহাটের মোল্লাহাটে কৃষি উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদ পরীক্ষামূলকভাবে লিলিয়াম ফুল চাষে সফলতা পেয়েছে। জেলাব্যাপী লিলিয়াম ফুলের চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যাতে কৃষকরা অল্প সময়ের মধ্যে চাষ করে লাভবান হতে পারেন।’