ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে মস্কোর হুঁশিয়ারি

২ দিন আগে
রাশিয়া সোমবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে আক্রমণ করতে ইউক্রেনকে যে অনুমতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দিয়েছেন, তা যুদ্ধের “আগুনে আরও তেল ঢালবে”, এবং আন্তর্জাতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে।   বাইডেনের নীতি পরিবর্তন ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে চলা এই যুদ্ধে আরও একটি নতুন, অনিশ্চিত উপাদান যোগ করলো। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ১,০০০ দিনের মাইলফলক স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।   আমেরিকার তৈরি এবং সরবরাহ করা এটিএসিএম ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন কোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে, তার উপর বিধিনিষেধ ওয়াশিংটন কমিয়ে আনছে। এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রবিবার (১৭ নভেম্বর) দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানায়। বাইডেন এতদিন এই পদক্ষেপ নাকচ করে দিয়ে এসেছেন এই আশঙ্কা থেকে যে, এর ফলে সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাবে এবং রাশিয়া আর পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। ক্রেমলিনের তরফ থেকে নিন্দা আসে দ্রুত। “এটা পরিষ্কার যে ওয়াশিংটনে বিদায়ী প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিতে চায়, যার মাধ্যমে তারা আগুনে তেল ঢালতে থাকবে এবং এই সংঘাত ঘিরে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবেন,” মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন। উত্তর কোরিয়া 'ফ্যাক্টর' ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা নিয়ে নতুন নীতিমালা পরিষ্কার নয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নেটো বলেছে যে, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াতে সৈন্য পাঠিয়েছে এবং ধারনা করা হচ্ছে তাদের রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বিতাড়িত করতে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। এর পরেই পরিবর্তনটা আসলো। একই সময়ে, রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেন বাহিনীকে পূর্বাঞ্চলীয় দনেতস্ক প্রদেশ থেকে ঠেলে পিছিয়ে দিচ্ছে। মস্কো ইউক্রেনের বেসামরিক অঞ্চলের উপর ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র অভিযানও চালাচ্ছে। পেসকভ সাংবাদিকদের গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিনের মন্তব্যর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পুতিন তখন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে হামলা করার অনুমতি দেয়া হলে সেটা উল্লেখযোগ্যভাবে ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে।   সেসময় পুতিন বলেন, এরকম পদক্ষেপ “এই সংঘাতের মৌলিক চরিত্র নাটকীয়ভাবে” বদলে দেবে। “এর মানে হবে, নেটো দেশগুলো – যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো – রাশিয়ার‍ সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।” পেসকভ দাবী করেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো শুধু দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করবে না, তারা কিয়েভকে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার ব্যাপারেও সাহায্য করবে। “এটা এই সংঘাতে তাদের সম্পৃক্ততার ধরনকে মৌলিকভাবে বদলে দেবে,” তিনি বলেন। ডনাল্ড ট্রাম্পের অঙ্গীকার নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দু’মাস পর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তাঁর প্রশাসন ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা দিয়ে যাবে কিনা, সে বিষয়ে তিনি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছেন। তিনি দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার অঙ্গীকারও দিয়েছেন।   ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি নিয়ে কিছুটা নমনীয় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি এবং তাঁর সরকার এক বছরের বেশি সময় ধরে বাইডেনের কাছে এই অনুমতি চাচ্ছিলেন।   “আজ মিডিয়াতে অনুমতি পাওয়ার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হচ্ছে,” জেলেন্সকি রবিবার তার নিয়মিত নৈশ ভাষণে বলেন। “কিন্তু আঘাত কথা দিয়ে হয়ে না। এসব জিনিস ঘোষণা করা হয় না। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজেরাই নিজেদের কথা বলবে,” তিনি বলেন। রণাঙ্গনে এই নতুন নীতি কী প্রভাব ফেলবে তা অনিশ্চিত। যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্যাট্রিক বেরি বলছেন, নীতিতে পরিবর্তন “কোন কৌশলগত প্রভাবের জন্য একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে।”   “যে ধরনের ইমপ্যাক্ট হতে পারে তা হল, এটা হয়তো রাশিয়ার যে অভিযানগুলো এখন চলছে, সেগুলোর গতি একটু কমিয়ে আনতে পারে,” তিনি বলেন। ইউক্রেন কুর্স্ক অঞ্চলে শত্রু সৈন্যদের সমাবেশ লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে পারে, বা সরবরাহ কেন্দ্র বা কমান্ড কেন্দ্রগুলোতে হামলা করতে পারে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি  রাশিয়ার সংসদ সদস্য এবং রাষ্ট্রীয় মিডিয়া, তাদের ভাষায়, উত্তেজনা বৃদ্ধির এই পদক্ষেপের নিন্দা করে এবং কঠোর জবাব দেয়ার হুমকি দেয়। “মনে হচ্ছে বাইডেন তাঁর প্রেসিডেন্সিয়াল মেয়াদ শেষ করে ইতিহাসে ‘ব্লাডি জো’ হিসেবে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করতে চান,” সিনিয়র আইনপ্রণেতা লিওনিদ স্লুটস্কি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তিকে বলেন। রুশ সংসদের উচ্চ কক্ষের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির উপ-প্রধান ভ্লাদিমির যাবারভ এই সিদ্ধান্তকে “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে বড় একটি পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন এটা “ট্রাম্পের স্বাধীনতার মাত্রা সীমিত করার প্রচেষ্টা।” রাশিয়ার গণমাধ্যমও একই ধরনের ভয়ানক ভবিষৎবাণী করছে। “যে পাগল লোকজন নেটোকে সরাসরি আমাদের দেশের সাথে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই তারা ভয়ানক কষ্ট পাবেন,” রোসিসকায়া গাযেটা বলে।   গত জুন মাসে পুতিন হুঁশিয়ারি দেন যে, নেটো ইউক্রেনকে রুশ ভূখণ্ড আক্রমণ করার অনুমতি দিলে, মস্কো পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য অন্যান্যদের দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। তিনি আবারো বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না।   
সম্পূর্ণ পড়ুন