মঙ্গলবার সৌদি আরবের রিয়াদে শীর্ষ আমেরিকান ও রুশ কর্মকর্তারা ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আয়োজিত বৈঠক শেষ করেছেন। কয়েকদিন পরই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মিশর, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগ দেবেন, যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গাজা ভূখণ্ডের দখল নেওয়ার অঙ্গীকারের বিপরীতে আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কি হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।
এই দুই পৃথক আলোচনায় ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গীকার রক্ষার অংশ হিসেবে ইউক্রেন এবং গাজার যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগের সাফল্যে (সৌদি) যুবরাজের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রতিফলন ঘটেছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প আবারও ঘোষণা দেন, তিনি দ্রুত যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।
কিয়েভকে রিয়াদের বৈঠক থেকে বাদ রাখায় ভলোদিমির জেলেন্সকির উদ্বেগ নাকচ করে দিয়ে ফ্লোরিডায় নিজস্ব বাসভবন মার-আ-লাগো থেকে ট্রাম্প বলছেন, “আমার এই যুদ্ধ বন্ধের ক্ষমতা আছে।”
সৌদি আরবের আলোচনায় ওয়াশিংটন ও মস্কোর সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবং এর মাধ্যমে সহসাই জো বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়াকে একঘরে করে রাখার ও ইউক্রেনকে “যত দিন প্রয়োজন, ততদিন” সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার নীতি থেকে সরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
পরিবর্তে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যুদ্ধ শেষে বাণিজ্য ও অন্যান্য বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে “রাশিয়ার অংশীদার হবার অবিশ্বাস্য সুযোগের” সদ্ব্যবহার করার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন।
গাজার পরিকল্পনা নিয়ে আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহের পরবর্তী অংশে যুবরাজ মোহাম্মদ মিশর, জর্ডান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্পের গাজার দখল নেওয়া ও সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে দিয়ে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” গড়ে তোলার অঙ্গীকারের বিপরীতে আরব দেশগুলোর জবাব নিয়ে আলোচনা করবেন।
ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনায় এ অঞ্চলের নেতাদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আগামী সপ্তাহে আরও বৃহত্তর পরিসরে কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য আরব লিগের বৈঠকের আগে তারা এখন একটি পাল্টা প্রস্তাব তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ একজন শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী
ইউক্রেন-গাজা নিয়ে কাজ করে সৌদি আরবের ৩৯ বছর বয়সী কার্যত শাসক বিন সালমান নিজেকে একজন শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং ট্রাম্প এখন তার পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য পূরণে এই আরব নেতার ওপর নির্ভর করছেন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে, তিনি প্রেসিডেন্ট না থাকার সময়টুকুতে তার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রেখে এবং গত মাসে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর সম্পর্কের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ।
ট্রাম্পের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রুশ নেতাকে একঘরে করে রাখার উদ্যোগের মাঝেও যুবরাজ মোহাম্মদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখেন।
পুতিনের সঙ্গে গত সপ্তাহে ফোন কলের পর ট্রাম্প জানান, দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে তিনি সম্মতি দিয়েছেন। এই বৈঠকেরও আয়োজন করবেন যুবরাজ মোহাম্মদ। সৌদি রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক-ধারাভাষ্যকার আলি শিহাবি জানান, এটা যুবরাজের কৌশলগত উদ্যোগগুলো সফল হওয়ার একটি উদাহরণ।