আসহাবে উখদুদের বিস্ময়কর বালক

১ মাস আগে
মুহাম্মদ ইবন গায়লান ও আবদ ইবন হুমায়দ রহ. সুহায়ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামাজ আদায় করে ঠোঁট নাড়াচড়া করতেন। তিনি যেন কথা বলছেন। তাকে বলা হল ইয়া রসুলাল্লাহ! আসরের নামাজ শেষে আপনি যেন চুপে চুপে কথা বলেন?

তিনি বললেন নবীগণের কোন একজন তার উম্মত নিয়ে গৌরববোধ করছিলেন। বলেছিলেন, এদের মুকাবিলায় কে দাঁড়াতে পারবে। তারপর আল্লাহ তাআলা তার নিকট ওয়াহী পাঠালেন, আমি তাদের শাস্তি দিব বা তাদের উপর শত্রু চাপিয়ে দিব। এ দুয়ের একটি গ্রহন করার জন্য তাদের ইখতিয়ার দিন। তারা শাস্তিকেই গ্রহণ করে নিল। সে মতে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর মৃত্যু চাপিয়ে দিলেন। ফলে একদিনেই তাদের সত্তর হাজার লোকের মৃত্যু হল।

 

এ হাদিসটি বর্ণনার সাথে তিনি পরবর্তী এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন। তিনি বলেন, কোন এক বাদশা ছিল। তার ছিল একজন গনক। সে তার জন্য ভবিষ্যৎ গণনা করত। একবার তাকে ঐ গণক বলল, একটি বুদ্ধিমান শক্তি সম্পন্ন বালক তালাশ করুন। আমি তাকে আমার এ জ্ঞান শিক্ষা দিব। কারণ আমার আশংকা হয় যদি আমি মারা যাই তবে আপনাদের থেকে এ জ্ঞান শেষ হয়ে যাবে। 

 

আরও পড়ুন: তাবলিগ জামাতের তালিমে যে বইটি পাঠ করা হয়

 

এ জ্ঞানের আধিকারী আপনাদের মধ্যে কেউ থাকবে না। তাদের বর্ণনানুযায়ি এক বালক তারা তালাশ করে বের করল। তারা তাকে গনকের কাছে হাযির হতে নির্দেশ দিল এবং তার কাছে আসা-যওয়া করতে বলল। সে মতে বালকটি তার কাছে আসা-যাওয়া করলে লাগল। আসা-যাওয়ার পথে এক গীর্জায় এক জন পাদ্রী থাকত। বর্ণনাকারী মামার রহ. বলেন, তৎকালে গীর্জার উপাসনাকারিগণ সত্য দ্বীন বিশ্বাসী ছিলেন। বালকটি যখনই সেখান দিয়ে যেত সে পাদ্রীকে তার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত। শেষে পাদদ্রী তাকে জানাল আমি আল্লাহর ইবাদত করি।

 

বালকটি পাদ্রীর কাছে সময় দিতে লাগল আর উক্ত গনকের কাছে যেতে দেরী করতে লাগল। এতে গণক বালকটির পরিবার পরিজনকে খবর পাঠায় যে সে প্রায়ই হাজির হয় না। বালকটি পাদ্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করে। পাদ্রী তাকে বলল, গণক যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তুমি কোথায় ছিলে, তবে তুমি বলবে যে, তুমি তোমার পরিবারের লোকদের কাছেই ছিলে। আর তোমার পরিবারের লোকরা যখন জিজ্ঞাসা করবে তখন বলবে গণকের কাছে ছিলে।

 

এভাবেই চলছিল। একদিন বালকটি মানুষের এক বিরাট ভিড়ের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করছিল। লোকদেরকে একটা হিংস্র জন্তু পথ আটকে রেখেছিল। কোন কোন রাবী বলেছেন। এ জন্তুটি ছিল একটা সিংহ। বালকটি একটা পাথর হাতে নিয়ে বলল, হে আল্লাহ! পাদ্রী যা বলে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, আমি যেন জন্তুটিকে হত্যা করতে পারি। এরপর সে পাথরটি ছুড়ে মারল এবং জন্তুটি মারা গেল। লোকেরা বলতে লাগল কে এ জন্তুটি হত্যা করেছে? অন্যরা বলল এ বালকটি। মানুষের মাঝে এতে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। তারা বলাবলি করতে থাকে যে, এই বালকটি এমন কিছু জ্ঞান শিখেছে যা অন্যরা শিখেনি। এক অন্ধও বালকটির কথা শুনতে পায়। সে তাকে বলল তুমি যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পার তবে তুমি অমুক অমুক জিনিস পাবে।

 

বালকটি বলল, আমি তোমার কাছে এই অর্থ চাই না। কিন্তু তুমি যদি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাও তবে কি তুমি সেই সত্তার উপর ঈমান আনবে যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিবেন? সে বলল, হ্যাঁ। তখন বালকটি আল্লাহর কাছে দোয়া করল। আল্লাহ এ অন্ধের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর এ অন্ধ ঈমান গ্রহণ করল।

 

সেই বাদশাহর কাছে তাদের এ ঘটনার সংবাদ পৌঁছল। সে তখন লোক পাঠিয়ে তাদের ধরে আনল। বলল, তোমাদের প্রত্যেককে আমি এমন ভাবে হত্যা করব যে, কাউকে এমনভাবে আমি আর হত্যা করিনি। তার নির্দেশে পাদ্রী এবং অন্ধ লোকটির একজনকে মাথার সিথি থেকে করাত দিয়ে চিরে শহীদ করে দেওয়া হল এবং আন্যজনকে অন্য একভাবে হত্যা করা হল।

 

পরে বালকটি সম্পর্কে সে নির্দেশ দিয়ে বলল তাকে নিয়ে অমুক পাহাড়ে যাও আর চূড়া থেকে তাকে ফেলে দিবে। লোকেরা তাকে পাহাড়ে নিয়ে গেল। যে স্থান থেকে তাকে ফেলে দেওয়ার ইচ্ছা করছিল। সে স্থানে তারা পৌছার পর নিজেরাই গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল। বালকটি ছাড়া আর কেউ তাদের বাকী রইল না। শেষে বালকটি ফিরে এল। বাদশাহ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। তদনুসারে তাকে সাগরে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু যারা সঙ্গে গিয়েছিল তাদেরকে আল্লাহ ডুবিয়ে দিলেন আর বালকটিকে বাঁচিয়ে দিলেন।

 

শেষে বালকটি বাদশাহকে বলল, আর যখন তীর নিক্ষেপ করবে তখন বলবে, ’এই বালকটির প্রতিপালক আল্লাহর নামে’। যা হোক, বাদশা উক্ত মর্মে নির্দেশ জারি করে এবং বালকটিকে শূলীতে ঝুলিয়ে ’এই বালকটির রব আল্লাহর নামে’ বলে তাকে তীর ছোড়া হল। তীর নিক্ষেপের সময় বালকটি তার হাত কানপট্রিতে স্থাপন করে রেখেছিল।

 

লোকেরা বলল, এ বালকটি এমন এক জ্ঞানর অধিকারী - যা আর কেউ জানে না। এই বালকের রবের উপর আমরা ঈমান আনলাম। বাদশাহকে বালা হল মাত্র তিন ব্যাক্তি তোমার বিরোধিতা করায় তুমি ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলে আর এখন পৃথিবীর সবাই তোমার বিরোধী হয়ে উঠেছে।

 

আরও পড়ুন: শেষ ভালো যার, সব ভালো তার

 

তারপর এই বাদশা আনেকগুলো গর্ত খনন করে এবং এতে লাকড়ি ফেলে আগুন জ্বালায়। পরে সে লোকদের একত্রিত করে বললঃ যে এই ধর্ম থেকে ফিরে আসবে তাকে ছেড়ে দিব আর যে ব্যক্তি ফিরে আসবে না তাকে এই অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করব। অতপর সে মু’মিনদেও অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‏قتِلَ أَصْحَابُ الأُخْدُودِ * النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ ‏- ‏(‏العَزِيزِ الْحَمِيدِ) ধ্বংস হয়েছে কুন্ড অধিপতিরা। ইন্ধনপূর্ণ যে কুন্ডে ছিল অগ্নি ...... যিনি পরাক্রমশালী এবং প্রশংসিত। (সূরা বুরুজ ৪-৮)

 

বালকটিকে পরে দাফন করা হয়। বর্ণনা করা হয় যে, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফত আমলে তার লাশ বের করা হয়। শহীদ হওয়ার সময় তার আঙুলগুলি যে কানপট্রিতে রাখা ছিল, তখনও ঠিক তেমনই ছিল (মুসলিম ৮/২২৯-২৩১, তিরমিজি: ৩৩৪০)

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন