আশুরার রোজার ফজিলত

৭ ঘন্টা আগে
ইসলামে বিশেষ কিছু দিন ও রাত রয়েছে যেগুলোতে ইবাদতের ফজিলত ও মর্যাদা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। তন্মধ্যে মহররম মাস ও তার ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরা একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন।

এই দিনে অনেক ঐতিহাসিক ও নববী ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগেও এই দিনটি বিশেষ সম্মানিত ছিল। ইসলামি শরিয়তে আশুরার দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এই রোজা রেখেছেন এবং সাহাবাদেরকেও তা পালনের জন্য উৎসাহিত করেছেন।

 

সাহাবি আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

 

صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفَّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَه আশুরার দিনের রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহ তাআলার কাছে আশা রাখি, (এর মাধ্যমে) তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

 

তবে আশুরার রোজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল, আশুরার দিনের সাথে তার আগের দিন বা পরের দিন অর্থাৎ ৯ বা ১১ মুহাররমও রোজা রাখা উচিত। কারণ আশুরার দিনকে ‘আহলে কিতাব’ও সম্মান করে। তারাও এ দিনে রোজা রাখে। তাই তাদের সঙ্গে মুসলমানদের আমলের পার্থক্য স্পষ্ট করা জরুরি একটি বিষয়।

 

আরও পড়ুন: নবীজি সকালে যে আমল করতেন

 

সেজন্য সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলতেন, صُومُوا التَّاسِعَ وَالعَاشِرَ وَخَالِفُوا اليَهُودَ তোমরা ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখ এবং ইহুদীদের ব্যতিক্রম কর। (জামে তিরমিজি: ৭৫৫; শুআবুল ঈমান বাইহাকি ৩৭৮৮)

 

এখানে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা একটি মারফূ হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত। (দ্রষ্টব্য: মুসলিম, হাদিস ১১৩৪; শরহু মুসলিম, ইমাম নববী ৮১২-৮১৩; ফাতহুল বারী ৪/২৮৮-২৮৯)

 

৯ তারিখে রোজা না রাখা হলে মূল বিষয় অর্থাৎ ইহুদি-নাসারাদের সাথে মুসলমানদের আমলের পার্থক্য স্পষ্ট করার জন্য ১১ তারিখেও রোজা রাখা যায়।

 

যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَخَالِفُوا الْيَهُودَ؛ صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا، أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا.

 

তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের ব্যতিক্রম কর। তার (আশুরার) আগে এক দিন কিংবা পরে এক দিন রোজা রাখ। (অর্থাৎ আশুরার দিনের সাথে আরেকদিন। (ইবনে খুযাইমা ২০৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২১৫৪)

 

(وفي سنده شيء من الضعف) এসকল বিষয়ে আরও বিস্তারিত ও সারগর্ভ আলোচনার জন্য দেখা যেতে পারে ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহ.-এর কিতাব ‘লাতাইফুল মাআরিফ ফীমা লিমাওয়াসিমিল আমি মিনাল ওয়াযাইফ’, পৃষ্ঠা : ১২২-১৪৯, দারু ইবনে খুযাইমা, রিয়াদ।

 

আশুরার রোজা শুধুমাত্র একটি সাধারণ নফল রোজা নয়; বরং তা অতীত গোনাহ মোচনের একটি বড় সুযোগ। পাশাপাশি এই রোজা আমাদের ইহুদি-নাসারাদের সাথে ইসলামি পরিচয়ের পার্থক্য প্রকাশেরও একটি মাধ্যম। তাই ১০ মুহাররমের রোজার সঙ্গে ৯ বা ১১ মুহাররম মিলিয়ে দুই দিন রোজা রাখা উত্তম। 

 

আরও পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে যে কারণে ঘূর্ণিঝড় হয়

 

আসুন, আমরা এই বিশেষ দিনটিকে কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী গুরুত্বসহকারে পালন করি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভের সুযোগ গ্রহণ করি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন