বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর যত কারণ আছে, তার মধ্যে অন্যতম হৃদ্রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে প্রতি বছর ১৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ হৃদ্রোগে মারা যান। অর্থাৎ বিশ্বে যত মৃত্যু হয় তার ৩৩ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ। দেশেও এ সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। প্রতি বছর দেশে ৩ লাখ মানুষ মারা যান এই রোগে, যা দেশের মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশের বেশি।
এক সময় হৃদ্রোগ শুধু বয়স্কদের ধারণা করা হলেও সমস্যার বাইরে নেই শিশুরাও। প্রতি বছর দেশে ৭৩ হাজার শিশু হৃদ্যন্ত্রের ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যা মোট শিশু জন্মের আড়াই শতাংশ। আরও আশঙ্কার বিষয়, অধিকাংশ অভিভাবকই জানেন না তাদের শিশুরা সমস্যায় আক্রান্ত।
জন্মের পর ওজন কম হওয়া, শরীর নীল হওয়াসহ কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেলেই হৃদ্রোগের চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল সচেতনতার মাধ্যমেই অধিকাংশ শিশুর হৃদ্রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। সেই জন্য গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতাল / আউটসোর্সিংয়ের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের কাছেই সেবা বুঝে নেয়ার পরিকল্পনা সরকারের
হৃদ্রোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাকনুন নাহার স্বর্ণ বলেন, ওজন কম হওয়া, দ্রত হাঁপিয়ে উঠা, শ্বাসকষ্ট, নীল হয়ে যাওয়া-- এ ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসে।
স্বাধীনতা প্রদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বলেন, কনসিভ করার আগে থেকেই মাকে সাবধান হতে হবে। এমন কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না, যেটাতে বাচ্চার হার্টের সমস্যা হতে পারে। কোনো অসুখ থাকলে আগে থেকেই চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে যেতে হবে। ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন ও ওবেসিটি থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মানসিক প্রশান্তির মধ্যে থাকতে হবে। কোনো ভ্যাকসিন দেয়া না থাকলে সেগুলো দিয়ে নিতে হবে। মোটকথা সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বাচ্চা নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিশেষ বিসিএসে সিস্টেম লস, ডাক্তার সংকট থেকেই যাচ্ছে
দেশের শিশু হৃদ্রোগ চিকিৎসায় যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও এখনো সচেতনতার অভাব, বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতা এবং আর্থিক সক্ষমতার অভাবে অনেক শিশু সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায় না। এজন্য সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায়ের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
]]>