এমন একটি হৃদয়ছোঁয়া দোয়া আজকের এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে একজন মুমিন আল্লাহর নিকট জীবনের কল্যাণ, মৃত্যুর শান্তি, ঈমানের সৌন্দর্য, তাকওয়ার গভীরতা, জান্নাতের অফুরন্ত সুখ ও আল্লাহর দর্শনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। এ দোয়ায় রয়েছে বিশ্বাস, প্রেম, ভয় ও প্রত্যাশার অনন্য সমন্বয়।
اَللّٰهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ، أَحْيِنِيْ مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ، وَتَوَفَّنِيْ إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ، وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِيْ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، وَأَسْأَ لُكَ كَلِمَةَ الْإِخْلَاصِ فِيْ الرِّضٰى وَالْغَضَبِ، وَأَسْأَ لُكَ نَعِيْمًا لَّا يَنْفَدُ، وَ قُرَّةَ عَيْنٍ لَّا تَنْقَطِـعُ، وَأَسْأَ لُكَ الرِّضَا بَعْدَ الْقَضَآءِ، وَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ، ولَذَّةَ النَّظَرِ إِلٰى وَجْهِكَ، وَالشَّوْقَ إِلٰى لِقَآئِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ ضَرَّآءَ مُضِرَّةٍ وَّ فِتْنَةٍ مُّضِلَّةٍ. اَللّٰهُمَّ زَيِّنَّا بِزِيْنَةِ الْإِيْمَانِ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُّهْتَدِيْنَ.
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিইলমিকা আল-গাইবি ওয়া কুদরাতিকা ‘আলাল-খালক, আহইনি মা আলিমতাল-হায়াতা খাইরল্লি, ওয়াতাওয়াফ্ফানী ইজা আলিমতাল-ওয়াফাতা খাইরল্লি। ওয়া আস্আলুকা খাশ্ইয়াতাকা ফিল-গাইবি ওয়াশ্শাহাদাহ, ওয়া আস্আলুকা কালিমাতাল-ইখলাসি ফির-রিদা ওয়াল-গাদাব। ওয়া আস্আলুকা নাঈমান লা ইয়ানফাদ, ওয়া কুর্রাতা ‘আইনিন লা তানকাতি। ওয়া আস্আলুকার-রিদা বাদাল-কাদা, ওয়া বারদাল-আইশি বাদাল-মাওত। ওয়া লায্যাতান-নাজার ইলা ওয়াজহিকা, ওয়াশ্শাওকা ইলা লিকাইকা। ওয়া আ‘উযু বিকা মিন দর্রা-ই মুদির্রাহ, ওয়া ফিতনাতিম্ মুদিল্লাহ। আল্লাহুম্মা জাই্যিন্না বিযীনাতিল-ঈমান, ওয়াজআল্না হুদাতাম মুহতাদিন।
আরও পড়ুন: নবীজি সকালে যে আমল করতেন
অর্থ: ইয়া আল্লাহ! আপনি যে আলিমুল গাইব, আপনি যে সৃষ্টির উপর ক্ষমতাবান, এ অসিলায় প্রার্থনা করি, আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতদিন আপনার জ্ঞানে জীবন আমার জন্য কল্যাণকর আর আমাকে উঠিয়ে নিন যখন আপনার জ্ঞানে মৃত্যু আমার জন্য উত্তম। আপনার কাছে প্রার্থনা, আপনাকে যেন ভয় করি গোপনে ও প্রকাশ্যে এবং ইখলাসের কথা বলি ক্রোধে ও আনন্দে (কারণ, এ দুই সময় হচ্ছে আবেগের তাড়নায় ভেসে যাওয়ার সময়)। প্রার্থনা করছি ঐ নেয়ামত, যা নিঃশেষ হবে না এবং ঐ আনন্দ, যার সমাপ্তি ঘটবে না। আপনার কাছে প্রার্থনা, যেন আপনার ফয়সালায় রাজি থাকি এবং মৃত্যুর পর শান্তির জীবন লাভ করি আর লাভ করি আপনার দর্শন-আনন্দ এবং আপনার সাক্ষাতের ব্যাকুলতা। আপনার কাছে আশ্রয় নিই কষ্টদায়ক বিপদ থেকে ও ভ্রষ্টকারী ফিতনা থেকে। ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে করুন ঈমানের শোভায় সুশোভিত এবং সুপথপ্রাপ্ত, পথের দিশারী (যেন নিজেরাও সুপথে থাকি, অন্যদেরও সুপথ প্রদর্শন করি)।
জীবন যেন কাটে রহমতের ছায়ায় আর মরণ যেন নিয়ে যায় রহমতেরই কোলে। অসহায় বান্দা সকল অবস্থায় শান্তিরই ভিখারী। এ জগতেও এবং সে জগতেও। كَلِمَةَ الْاِخْلَاصِ فِىْ الرِّضَى وَالْغَضَبِ (ইখলাসের কথা বলি ক্রোধে ও আনন্দে) এ দুই অবস্থায় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তার জীবন তো তাকওয়ায় পূর্ণ হয়ে গেল। وَأَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِى الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ(আপনাকে যেন ভয় করি গোপনে ও প্রকাশ্যে)। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় যেন খোদাভীতি অটুট থাকে। কর্মের ফল দৃশ্যমান থাকুক বা অদৃশ্য। وَ الشَّوْقَ إِلٰى لِقَآئِكَ ولَذَّةَ النَّظَرِ إِلٰى وَجْهِكَ (আপনার দর্শন-আনন্দ ও সাক্ষাতের প্রত্যাশা)।
জান্নাতি মুমিনদের খোদার দর্শন লাভ ও তার সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য আহলে সুন্নতের এক স্বীকৃত আকিদা। জান্নাতবাসীর জন্য এই দীদার হবে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। نَعِيْمًا لَّا يَنْفَدُ (ঐ নেয়ামত, যা শেষ হবে না, ঐ আনন্দ যার...)। অর্থাৎ যে শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাকে দান করবেন, তা যেন স্থায়ী হয়। এমন যেন না হয় যে, সকল দান ক্ষণস্থায়ী সাব্যস্ত হল! زَيِّنَّا بِزِيْنَةِ الْإِيْمَانِ (আমাদেরকে ঈমানের শোভায় সুশোভিত করুন)। শুধু ঈমান থাকা বা ঈমানের সাধারণ পর্যায় নয়, ঈমানের প্রকৃত স্বাদ তো তখনই পাওয়া যাবে, যখন ঈমানের সুষমা ও সৌন্দর্য এবং ঈমানের উঁচু বৈশিষ্ট্যগুলোও বিদ্যমান থাকবে।
]]>