আলমডাঙ্গায় ডিলারদের অনিয়মে দাম বাড়ছে সারের, বিপাকে কৃষকরা

৩ সপ্তাহ আগে
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সার ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয়কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে হলেও তারা কার্যক্রম চালাচ্ছেন পৌর এলাকায়। বেশিরভাগ সার ডিলার নিয়ম না মেনে তাদের ইচ্ছেমতো সার বিক্রি করছেন। এতে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। তবে তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের।

১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ও পৌর এলাকায় ১টি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির সার বিক্রির জন্য ডিলার বরাদ্দ পান। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৩০টি ও পৌর এলাকায় ২টি প্রতিষ্ঠান বিএডিসির সার বিক্রির ডিলার বরাদ্দ পায়। তবে সার বিক্রির ডিলার পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো শুরু থেকেই ইউনিয়ানের পরিবর্তে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

 

এসব ডিলাররা ইউনিয়নে সাইনবোর্ড টানিয়ে ঘরের সামনে কয়েক বস্তা সার রেখে বৈধতা তৈরির চেষ্টা করেন। বিসিআইসি ও বিএডিসির সার ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয়কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে হলেও কার্যক্রম চলে পৌর এলাকায়। বেশিরভাগ সার ডিলাররা নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো সার বিক্রি করছেন। পৌর এলাকা থেকে এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

 

আরও পড়ুন: বাগেরহাটে জনবল সংকটে বিএডিসির তিন প্রতিষ্ঠান, সেবাবঞ্চিত কৃষক

 

আলমডাঙ্গা উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেশি। ধান, গম, পাট, ভুট্টা, তামাক, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ হয় নিয়মিত ভাবে মৌসুমে। ফসল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হল সার। কৃষকরা ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার ব্যবহার করেন। প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১৩৫০ টাকা, ডিএপি ১০১৫ টাকা, টিএসপি ১৩৫০ টাকা ও এমওপি ১০০০ টাকা দরে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির কথা থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন ডিলাররা।

 

ইউনিয়নে ডিলাররা সার বিক্রি না করায় কৃষকরা দূরদূরান্ত থেকে পৌর এলাকায় সার কিনতে ছুটে আসেন। অনেক সময় চাহিদার তুলনায় কম, কখনও সার না পেয়েই ফিরে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

 

আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৬ হাজার ১২৭ জন তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। ৪৬টি ব্লকের আওতায়  ২৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়। প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় বেশি ফসল উৎপাদন হয়। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ পৌর এলাকায় থাকা সার ডিলারদের নিজ নিজ ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনে দিলেও তা এখন বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে ইউনিয়নের ১৫ জন বিসিআইসি সার ডিলারের মধ্য ৯ জন ও বিএডিসির ৩০ জন সার ডিলারের মধ্য ২০ জন আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়ায় তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

 

তবে ইউনিয়নে সার বিক্রি করতে তারা নারাজ। চলতি বছরের জুন মাসে আলমডাঙ্গা উপজেলায় বিএডিসি ও বিসিআইসির ৪৮ জন ডিলারে মাঝে চার রকমের রাসায়নিক সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন। কৃষকরা জানান, ফসল চাষ করা বর্তমানে বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। সার কিনতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। হারদি ইউনিয়ন থেকে সার কিনতে আসতে হয় আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায়। প্রতি বস্তা সার পরিবহনের জন্য ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা করে। ১০ বস্তা সার নিলে ৫০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। অনেক সময় সার পাওয়া যায় না।

 

ফসলে নির্দিষ্ট সময়ে সার দিতে না পারলে উৎপাদন হ্রাস পায় জানিয়ে কৃষকরা বলেন, সারের ডিলাররা সার বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। আবার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আমরা সাধারণ কৃষকরা চাই স্বস্ব ইউনিয়নের ডিলাররা ফিরে আসুক। তাহলে সকল সংকট দুর হবে। কৃষিতে প্রাণ ফিরে পাবে।

 

আরও পড়ুন; কর্ণফুলী পেপার মিল: নতুন ৬টি প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা বিসিআইসির

 

সার ডিলাররা বলেন,আমরা ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। গোডাউন পেলেই সম্ভব হবে। কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করছি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে তার দায় তাকে বহন করতে হবে।

 

আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, কৃষকরা সহজে সার পায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। ডিলাররা আস্তে আস্তে ফিরে যাচ্ছে নিজেদের ইউনিয়নে। বরাদ্দ অনুযায়ী কৃষকরা সার পাচ্ছেন। বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি জানলাম। কেউ যদি বেশি দামে সার বিক্রি করেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, ডিলাররা সময় চেয়েছেন, সময় দেয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের ফিরতে হবে। যারা নিজ এলাকায় গিয়ে সার বিক্রি করবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ডিলার বাতিল করা হবে। কৃষকদের সারের বিষয়ে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন