তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি তেহরানের তিন নম্বর জেলায়। ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোতে সোমবার ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।
বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আশপাশে এখন আর কিছুই নাই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে রয়েছে।’
ইরানের রাজধানীতে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান। বন্দর আব্বাসের পরিস্থিতিও খারাপ। ফলে ওই এলাকা থেকেও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, আর কান্নাকাটি করছেন। এই আর্তনাদ আসলে সহ্য করা যায় না।’
আরও পড়ুন: খামেনি কোথায় আছেন, জানেন ট্রাম্প!
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ জন মানুষ সম্প্রতি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তেহরানে গেছেন জানিয়ে ওয়ালিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানান, মূলত তারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য এখানে এসেছিলেন। তেহরানে যাওয়ার পর থেকে তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর তাদের হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। হাসপাতাল নিরাপদ হবে ভেবেই আমরা এই পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু গত পরশুদিন হাসপাতালেও আক্রমণ হয়েছে। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’
দূতাবাসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তাদের শান্ত করার জন্য আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। কীভাবে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যায়, সেই চেষ্টাও চলছে।
‘দূতাবাসের ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভারামিনে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের তেহরানের পাশে সাবেতে রাখার ব্যবস্থা করছি। ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে যদি একদিনের জন্যও যুদ্ধবিরতি দেয়, তখনই আমরা সবাইকে ইরানের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করবো’, বললেন ওয়ালিদ ইসলাম
আরও পড়ুন: ইরানের আকাশ এখন সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে: ট্রাম্প
বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ নানা কারণে বহু বাংলাদেশি ইরানে পাড়ি জমিয়েছেন। সরকারি হিসেবে, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক জানিয়েছেন, ‘তেহরানে বর্তমানে ৪০০ জনের মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে তারা যেন যোগাযোগ করতে পারেন, এজন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছে তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। সেইসঙ্গে, ঢাকাতেও আরেকটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।’
]]>