আমানতের টাকা ফেরত পেতে সমিতির গ্রাহকদের ঝাড়ু মিছিল

৩ সপ্তাহ আগে
‘আমাদের বাঁচতে দাও, আমাদের টাকা ফেরত দাও’ এই স্লোগানে হাজারও নারী-পুরুষ সমবায় সমিতিতে রাখা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে ঝাড়ু মিছিল করে বিক্ষোভ করছে।

রোববার (৬ এপ্রিল) মাদার মাদারগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে গ্রাহকরা।


এ সময় গ্রাহকরা মাদারগঞ্জ মডেল থানার সামনে ঢাকা-মাদারগঞ্জ মহাসড়ক প্রায় ৩ ঘণ্টা অবোধ করে রাখেন। এই আন্দোলনে অংশ নিতে আসার পথে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।


মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানত রাখা অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটির ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।


রোববার দুপুর ১২টায় জামালপুরের মাদারগঞ্জের বালিজুড়ি বাজার এলাকায় শহীদ মিনার থেকে বের করা হয় ঝাড়ু মিছিলটি।


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২৩টির অধিক সমবায় সমিতি ৫০ হাজার গ্রাহকের প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবার পর দীর্ঘদিন থেকেই এই আন্দোলন চলছে।


রোববার সকালে উপজেলার বালিজুড়ি বাজারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা একটি মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদর্শন করে থানা মোড় ও ফায়ার সার্ভিস এলাকায় রাস্তায় রশি বেঁধে ঢাকা-মাদারগঞ্জ মহাসড়ক অবোধ করে রাখে।


এ সময় মাদারগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বে থাকা বেশ কিছু সেনা সদস্য মহাসড়ক থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরানোর চেষ্টা করার পর সেনাবাহিনী সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে গেছেন।


আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের অবস্থান নেয়ায় মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে জামালপুর-ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ  হয়ে যায়।


ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২৩টি নামে সমবায় সমিতি অফিস খোলা হয়। এর মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতি, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতি, স্বদেশ বহুমুখী সমবায় সমিতি, নবদ্বীপ বহুমুখী সমবায় সমিতি, জনতা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি। এসব সমিতিতে বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক তৈরি করে। প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার আমানত জমা রাখেন। বেশকিছু দিন সমিতিগুলো গ্রাহকদের টাকা দিলেও হঠাৎ করেই আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকেই আন্দোলনে নামেন গ্রাহকরা।


আরও পড়ুন: ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড


বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন টাকা উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী রাজু।


তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সমিতি সংশ্লিষ্ট ২০ জনকে  গ্রেফতার করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না, তাদের গ্রেফতার করে আমাদের জানালে আমরা আলোচনায় বসবো। প্রশাসন একজনকে গ্রেফতার করে হয়রান হয়ে গেছে, প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমরা এ বিক্ষোভ আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত করব যতক্ষণ পর্যন্ত এসপি ডিসি তারা উপস্থিত হয়ে আমাদের গ্রাহকদের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ না হবেন ততদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’


এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান মোখলেছ, টাকা উদ্ধার কমিটির সদস্য সোনা মোল্লা, ভুক্তভোগী আমানতকারী আসমা বেগম।


বক্তারা ২৩টি সমবায় সমিতির পরিচালকদের ছবি সম্মিলিত একটি ব্যানার সামনে রেখে অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় এনে অতিদ্রুত তাদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।


জামালপুর জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল।


ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদ্বীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।


শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।


এদিকে, আমানতের টাকা ফিরে পেতে আন্দোলনে আসার পথে ফাতেমা বেগম (৬৫) নামে এক নারী গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে।


নিহত ফাতেমা বেগম উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের  ভাংবাড়ী এলাকার আবুল হাশেমের স্ত্রী।


মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা থানার সামনে অবস্থান করছেন।’


নারী গ্রাহকের মৃত্যুর বিষয়ে ওসি বলেন, ‘তিনি তার বাড়িতে অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন