তাবলিগ জামাতের এই ইজতেমা শুধু একটি বার্ষিক ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি এক ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, যার সূচনা হয়েছিল প্রায় এক শতাব্দী আগে, ১৯২৬ সালে দিল্লির বস্তি নিজামউদ্দিনে। সেখানে একটি ছোট কাঁচা মসজিদ ছিল, যার তত্ত্বাবধান করতেন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.)-এর পিতা মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাইল (রহ.)।
ইতিহাস অনুযায়ী, মাওলানা ইসমাইল (রহ.)-এর রীতি ছিল, যখনই কোনো মুসলিম কাফেলা বস্তি নিজামউদ্দিনের পাশ দিয়ে যেত, তিনি তাদের মসজিদে আমন্ত্রণ জানাতেন, আপ্যায়ন করতেন এবং ইসলামের মৌলিক বার্তা স্মরণ করিয়ে দিতেন, নবী করিম সা.-এর পর আর কোনো নবী আসবেন না, সুতরাং তার বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: ইজতেমা হবে জাতীয় নির্বাচনের পর: ধর্ম উপদেষ্টা
মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) এই পিতৃকর্মকে আরও সুসংগঠিত রূপ দেন। তিনি মনে করতেন, ইসলামি দাওয়াতের প্রকৃত শক্তি নিহিত রয়েছে মুখোমুখি কথা বলার মধ্যে। যখন একজন মুসলমান অন্য একজনকে কোমল ও আন্তরিক ভাষায় দাওয়াত দেয়, তখন সেই কথা হৃদয়ে প্রভাব ফেলে। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি শুরু করেন গাঁ-গাঁ, পাড়া-মহল্লায় দাওয়াতি কাফেলা পাঠানো, যারা মুসলমানদের নামাজের দিকে আহ্বান করতেন এবং ইসলামের আলোয় তাদের জীবন আলোকিত করতেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই তাবলিগি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে, পরে বিশ্বজুড়ে। আজ রায়বেন্ড ইজতেমা সেই ধারাবাহিকতারই ফল—যেখানে লাখো মুসলমান একত্রিত হয়ে আল্লাহর জিকির, তওবা, দোয়া ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নবীজির সা. দাওয়াতি মিশনকে স্মরণ করে।
রায়বেন্ড ইজতেমার এই দ্বিতীয় পর্বেও দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণের আশা করা হচ্ছে। সমাপনী দিনে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতোমধ্যেই তাবলিগি ভাইয়েরা রায়বেন্ডে সমবেত হচ্ছেন। রায়বেন্ড ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে ১৬ নভেম্বর রোববার।
রায়বেন্ড মারকাজ পাকিস্তানের লাহোরের কাছে রায়বেন্ড শহরে আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তানের তাবলিগ জামাতের একটি কেন্দ্র। যাতে একটি মসজিদ এবং মাদ্রাসা রয়েছে।
মারকাজ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। কিস্তানের মুসলমানদের বৃহত্তম সমাবেশ। পাকিস্তান ও বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান এই স্থানে আসেন। এ ইজতেমা রায়বেন্ড মারকাজ দ্বারা পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয়। বিপুল সংখ্যক লোক অংশ নেওয়ার কারণে এটি এখন চার ভাগে বিভক্ত হয়েছে। প্রতি বছর দুটি অংশ এবং পরের বছরে দুটি অংশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি অংশ তিন দিন স্থায়ী হয় আর শেষ দিনে বিশেষ মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। রায়বেন্ড মারকাজ ইজতেমার কোনো অংশে বিদেশিদের আসতে নিষেধাজ্ঞা নেই। বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতগণ এই দিনগুলিতে আমন্ত্রিত হন।
]]>
১৮ ঘন্টা আগে
২







Bengali (BD) ·
English (US) ·