আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালের সামনে রাজসিক মোড়ে অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নানান স্লোগান দিলেও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ শনিবার রাত ১১তা ১০ মিনিটে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে আন্দোলনকারীদের রাজপথ ছাড়তে নিষেধ করেন। সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠকদের মতামত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর ঘোষণা দেন তিনি।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর রাত ৩টার পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন সংগঠকরা। সেখানে হাসনাত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আজকে যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসাথে এতদিন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো বিধান ছিল না, কিন্তু আজকেই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ঘটনাগুলোকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধাপরাধীদের ‘ক্ষমা চাওয়া’ ও মুজিববাদী বামদের প্রসঙ্গে যা বললেন তথ্য উপদেষ্টা
তবে, একই সঙ্গে এই ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপকে যথেষ্ট মনে করছেন না তিনি, ‘এতটুকু যথেষ্ঠ না, কারণ জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। জুলাইযোদ্ধারা আওয়ামী লীগ দ্বারা হামলার স্বীকার হচ্ছেন। এই বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান এবং পদক্ষেপ জানতে চাই।’
এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার দাবি করেন হাসনাত। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল হওয়ার কথা থাকলেও আমরা মে মাসে এসেও দেখছি সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। সে জন্য আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকরি সংস্কার চাই। একইসাথে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, বিগত দেড় দশকে জুডিশিয়ারিতে যেসব বিচারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেখানে স্বজনপ্রীতি ও দলের প্রতি আনুগত্য দেখে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা শিকার হয়েছেন এবং ভিকটিম পরিবারের ন্যায্যতা এই ট্রাইব্যুনাল থেকে নিশ্চিত হবে কি-না, সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে জনতার পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সংস্কার কার্যে সরকারকে হাত দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রতিটি বিভাগে ট্রাইব্যুনালের অফিস স্থাপন করতে হবে। যাতে তৃণমূলে ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী নাগরিকদের আইনসেবা পেতে কোনো ধরনের বেগ না পোহাতে হয়।’
আওয়ামী লীগের মিডিয়া ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এখনও অটুট থাকায় হাসনাত উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার জন্য আওয়ামী কলাবরেটর যে কালচারাল উইং রয়েছে, সেই উইংগুলো কিন্তু অ্যাকটিভ হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের প্রতি সমর্থন উৎপাদনকারী সাংস্কৃতিক-মিডিয়া এবং অর্থনৈতিক ফার্মগুলো এখনও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন করতে এবং এই আন্দোলনকে দেশি-বিদেশি শক্তির চক্রান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা আওয়ামী লগের ফ্যাসিবাদের এবং গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের জন্য শাহাদাত বরণকারী সকল নাগরিকের মানবিক মর্যাদার প্রতি চরম অবমাননা।’
‘আওয়ামী লীগের যেসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং পলাতক গণহত্যাকারীদের অর্থনৈতিক যোগান এখনো পর্যন্ত অটুট রয়েছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত খবর রয়েছে, মন্ত্রণালয়গুলোতে এবং আমাদের যেসকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড রয়েছে সেখানেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাসরি সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং সেটির মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের যে অর্থনৈতিক কাঠামো আছে এই অর্থনৈতিক কাঠামো এখনও অটুট রয়েছে। এগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যাবহার করতে হবে।’–তিনি যোগ করেন।
আরও পড়ুন: বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত
হাসনাত আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও আওমীলীগ এর প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করা হবে। এ ব্যাপারে হাসনাত বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে স্পষ্ট টালবাহানা হয়েছে। এই ৩০ দিন সরকারকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হবে।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘সোমবারের প্রজ্ঞাপন জারি হলে তখন আনন্দ মিছিল করা হবে।’